‘মুখে ভাত’ বনাম ‘মুখে রুটি’—এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে ইডির হেফাজতে থাকা রাজ্যের অপসারিত মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘চাহিদা’ মেটাতে এখন কার্যত লড়াই চলছে ভাত আর রুটির মধ্যে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রাজ্যের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ্যসচিব পার্থবাবুর দাবি, দুপুরের মেন্য়ুতে তাঁর ভাত-ই চাই। কারণ ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বরাদ্দ খাবার অর্থাৎ ফল, রুটি অফার করা হয়েছে তাঁকে ইডি-র তরফে। তবে ইডি সূত্রে খবর, ৬৯ বছরের অপসারিত মন্ত্রী সাফ জানিয়েছেন, তিনি ভাত-ই খেতে চান, যে এই আবদার মানতে নারাজ তদন্তকারী সংস্থার কর্তারা। একে বয়েস হয়েছে পার্থবাবুর, তার উপর তিনি ডায়াবেটিক রোগী—ফলে কোনও রকম ঝুঁকি নিতেই চায় না ইডি। পার্থবাবুর এমন নাছোড় আবদারে নাস্তানাবুদ হয়ে শেষ পর্যন্ত ‘ম্যাডাম অর্পিতা’ অর্থাৎ মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ধৃত বান্ধবীর দ্বারস্থ হতে হয়েছে ইডির তদন্তকারীদের। আর সেই টোটকাতেই কাজ করেছে শেষমেশ।
পার্থবাবু খাদ্যরসিক মানুষ, এ দিকে শরীরে তাঁর রোগের ডিপো। ডায়াবেটিস, ওবেসিটি… এইসব সমস্যার সঙ্গে ইডির প্রশ্নের মুখে তিনি জর্জরিত। প্রথম দিকে তিনি নাকি কিছুই খাচ্ছিলেন না। এরই মধ্যে ভুবনেশ্বর এইমস থেকে হয়েছে তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষাও। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার জেরা চলাকালীন ইডির কাছে তিনি অদ্ভুত আবদার রাখেন: দুপুরে তাঁর ভাত-ই চাই। ডায়াবেটিসের কারণেই পার্থবাবুকে ভাত দিতে চাইছে না ইডি। এ দিকে, বৃহস্পতিবার মন্ত্রী জানিয়ে দেন, ভাত আর চিনি না-দিলে কোনওমতেই কোনও প্রশ্নের জবাব দেবেন না তিনি। এরপরই অফিসারেরা দ্বারস্থ হন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের। সমস্যার কথা অর্পিতাকে বোঝাতে তিনি একরকম ধমকের সুরেই নাকি পার্থবাবুকে বলেন: ভাত খাওয়া চলবে না। শরীর অসুস্থ হয়ে পড়লে লড়াই চালানোই তো মুশকিল রহয়ে পড়বে। এরপর অল্প ভাত আর রুটি মিশিয়ে খেয়েছেন পার্থবাবু। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, ৪৮ ঘণ্টা অন্তর পার্থ ও অর্পিতার স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো হচ্ছে জোকার ইএসআই-এ।
ভুবনেশ্বর এইমসে পার্থবাবুর মেডিক্যাল পরীক্ষা করানোর পর চিকিৎসকেরা জানান, ১৫ বছর ধরে পার্থবাবু টাইপ-২ টায়াবেটিসে আক্রান্ত। আজকাল হু-হু করে বাড়ছে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা। আর এই টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে খাবার নিয়ন্ত্রণে রাখা ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। এক্ষেত্রে ক্যালোরি মেপে খাবার খাওয়া, নিয়মিত শরীরচর্চা এসব খুবই জরুরি। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের কারণ অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা। অতিরিক্ত পরিমাণ ক্যালোরির খাবার, চিনি-আলু, প্রসেসড ফুড বেশি খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়বেই। সাধারণত সুগারের সমস্যা থাকলে ভাত এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ ভাতের মধ্যে কোনও ফাইবার নেই, কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণই বেশি। পরিবর্তে ব্রাউন রাইস, কুইনোয়া এসব খেতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সুগার হলেই যে ভাত চিরতরে বন্ধ এরকমটা মোটেই নয়—নিয়ন্ত্রিত ক্যালোরি আর পরিমাণ মেপে খেলে যে অসুবিধে নেই, একথাও অবশ্য বলেছেন চিকিৎসকেরা।
এ প্রসঙ্গে মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বললেন, ‘‘ডায়াবেটিসের রোগীরা যদি মেপে ভাত খান, তাহলে কোনও অসুবিধে নেই। ভাত-রুটি একসঙ্গে নয়। তবে কী খাচ্ছেন, সে বিষয়ে নিজেকেই সতর্ক থাকতে হবে। সঙ্গে পরিমাণও।’’ ডায়াবেটিস-রোগীদের জন্য ভাত খাওয়া আদৌ যুক্তিযুক্ত কি না, সে ব্যাপারে ডায়াটেশিয়ান অরিজিৎ দে বলেন, ‘‘গ্লাইসেমিক ইনডেক্স দেখে তবেই খাবার বাছুন। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হল খাবার থেকে শরীরে কতটা পরিমাণ গ্লুকোজ তৈরি হচ্ছে, সেই সম্পর্কে একটা ধারণা। লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল, কমলালেবু, ন্যাশপাতি, স্ট্রবেরি, পেয়ারা। সাদা চাল, সাদা ময়দা, চিঁড়ে, ব্রেড, পপকর্ন, বিস্কুট, কর্নফ্লেক্স, আলু, চিনি এসব একেবারেই বাদ দিতে হবে।’’ তবে সুগার বর্ডার লাইনে থাকলে যে কোনও ফল সারাদিনে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত খাওয়া যেতে পারে—বলছেন অরিজিৎ। তাঁর পরামর্শ, ‘‘৭৫ গ্রামের বেশি চালের ভাত না খাওয়াই ভাল। ভাতের সঙ্গে প্লেট ভরান প্রচুর সবজি আর স্যালাডে। রাতে কোনও ভাবেই ভাত খাবেন না। ৭০ শতাংশের বেশি কোকা রয়েছে, এরকম ডার্ক চকোলেট খান। এর মধ্যে থাকা ফ্ল্যাভিনয়েড ইনসুলিনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণে রাখে।’’