গত দু’বছরে কোভিড আতঙ্কের মধ্যে বেশিরভাগই ভুলতে বসেছিল ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়ার মত মশাবাহিত রোগের কথা। এছাড়াও হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা এসব তো আছেই। কোভিডের সংক্রমণ গত বছরের এই সময়ে এতটাই বেশি ছিল যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হবার খবর সেই ভাবে প্রকাশ্যে আসেনি। ডেঙ্গির আক্রমণে প্রতি বছরই ভারতে বেশ কিছু মানুষের মৃত্যু হয়। কোভিড প্রকোপের মধ্যেও থাবা বসিয়েছে ডেঙ্গি। কোভিড আর ডেঙ্গির জোড়া প্রকোপে অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতি বছর ১৬ মে জাতীয় ডেঙ্গি দিবস পালিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, প্রতি বছর ৪০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। স্ত্রী এডিস ইজিপ্টাই ডেঙ্গি ভাইরাস ছড়ায়। তবে সময়মত ডেঙ্গির চিকিৎসা শুরু না হলে বিপদ। তা যেতে পারে জটিলতার দিকে। ডেঙ্গি সম্পর্কে সকলকে সচেতন করা এবং চিকিৎসার প্রয়োজনে সতর্কমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতেই এই বিশেষ দিনটি পালন করা হয়। মুম্বইয়ের মাসিনা হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ তৃপ্তি গিলাদা নিউজ ৯-কে ডেঙ্গির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে সচেতন করেছেন।
কালবৈশাখী আর বর্ষার শুরুতেই বাড়ে ডেঙ্গির প্রকোপ। বর্ষাকালে মশাবাহিত রোগের মধ্যে প্রধান হল ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলে শরীরে প্লেটলেট কমে যায়। সেই সঙ্গে লিভার , কিডনি ঠিকমতো কাজ করে না। যেখান থেকে গুরুতর জটিলতা তৈরি হয়। তবে ডেঙ্গিতে কমেছে মৃত্যুহার। তবে আগে থেকে সতর্ক না হলে যে বিপদ বাড়বে একথা কিন্তু বারবার বলেছেন চিকিৎসক। কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর যেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে তেমনটা কিন্তু থাকে ডেঙ্গির ক্ষেত্রেও।
যাঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা সবচাইতে বেশি হয়। বিশেষ করে বয়স্ক আর শিশুরা পড়ে সবথেকে বেশি সমস্যায়। ডাঃ গিলাডা আরও জানান, ডেঙ্গি পরবর্তী সময়ে শরীরে কমে যায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। সেই সঙ্গে দুর্বলতা কাটতেও বহুদিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়। প্রাথমিক কাজকর্ম বাধা পায় এমনকী হাঁটাচলা করতেও সমস্যা হয়। আর ডেঙ্গির পর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং দুর্বলতা এতটাই কম থাকে, যে কোনও সংক্রমণে সহজেই কাবু হয়ে পড়ে শরীর।
এছাড়াও ডেঙ্গির ফলে পেশির ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা এসবও কিন্তু খুব সাধারণ। একে ব্রেকবোন ফিভার বলা হয়। কিন্তু পলিআর্থ্রালজিয়া (একাধিক জয়েন্টে ব্যথা) এবং মায়ালজিয়াস (পেশীর ব্যথা) ডেঙ্গি থেকে সেরে উঠলেও বেশ কিছুদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। আবার একবার সেরে গেলেও ফিরে আসতে পারে। এর সঙ্গে খিদে মন্দা, বমি বমি ভাব এসব বাড়তেই থাকে। জ্বরে শরীরের বিপাক ক্রিয়া বেড়ে যায়। যে কারণে কিন্তু ওজনও কমে যায় তাড়াতাড়ি। এর সঙ্গে শরীরে প্রয়োজনীয় খনিজ আর ভিটামিনেরও ঘাটতি হয়। ডেঙ্গি থেকে সেরে ওঠার পর সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা জাঁকিয়ে বসে তা হল চুল পড়ে যাওয়া। প্রচুর চুল উঠতে থাকে। এমনকী দেখা দিতে পারে অ্যালোপেসিয়ার সম্ভাবনাও। সঙ্গী হিসেবে থাকে ডিপ্রেশনও। যা দীর্ঘদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।