Dengue: নগরায়ন এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় ডেঙ্গির মতো রোগ শহরতলি, গ্রাম-গঞ্জ, মফস্বলে ছড়িয়েছে, চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী

megha |

Sep 23, 2022 | 12:35 PM

Dengue Outbreak: ২০১৭ থেকে ২০২১—এই পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৯ বাদ দিলে, রাজ্যে এ বছর সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু কেন?

Dengue: নগরায়ন এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় ডেঙ্গির মতো রোগ শহরতলি, গ্রাম-গঞ্জ, মফস্বলে ছড়িয়েছে, চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী

Follow Us

মেঘা মণ্ডল

রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর রাজ্যেজুড়ে একদিনে মোট ৯৬৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন ডেঙ্গিতে। শেষবার রাজ্যে একদিনে এত সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২০১৯ সালে। বুধবার যদিও সেই সংখ্য়া কমে হয়েছে ৭০১। উত্তর ২৪ পরগনার, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, মুর্শিদাবাদ এবং দার্জিলিঙে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। মশার আঁতুড়ঘর খুঁজে বের করতে সক্রিয় প্রশাসনও। ২০১৭ থেকে ২০২১—এই পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৯ বাদ দিলে, রাজ্যে এ বছর সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু কেন? এই প্রসঙ্গে TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয় সংক্রামক রোগের চিকিৎসক অমিতাভ নন্দীর সঙ্গে।

তিনি যা বললেন…

এডিস ইজিপ্টাই মশার মাধ্যমে মানুষের শরীরে ডেঙ্গির ভাইরাস সংক্রমণ ঘটায়। মশা কোনও ডেঙ্গি রোগীকে কামড়ালে তার হুলে ডেঙ্গির জীবাণু লেগে যায়। এরপর ওই মশা যখন অন্য কোনও মানুষকে কামড়ায়, তখন স্যালাইভা বা মশার লালার মাধ্যমে ওই ব্যক্তির শরীরে ডেঙ্গির ভাইরাস প্রবেশ করে। এইভাবে ডেঙ্গির ভাইরাস এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

মশার সংখ্যা যত কম থাকবে, ডেঙ্গির ঝুঁকিও কমবে। মশার ঘনত্ব যত বেশি হবে, এই রোগ তত বেশি ছড়াবে। আর এই মশার ঘনত্ব বাড়ে বর্ষার সময়। বর্ষার সময় মশা জন্ম নেয়। ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার মশা ডিম পারে জমা ও স্থির জলে। লার্ভা, পিউপা ও পুর্ণাঙ্গ মশা—এই প্রক্রিয়াটি স্থির জল ছাড়া সম্ভব নয় এবং এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে সময় লাগে মাত্র ৭-১০ দিন। কোনও জায়গায় যদি ৭ দিন ধরে জল জমে না থাকে, তাহলে ডিম থেকে মশা তৈরি হতে পারে না। সেক্ষেত্রে মাঝপথেই লার্ভাগুলো নষ্ট হয়ে যায়।

এই বছর যে বর্ষা হচ্ছে তা ভরা বর্ষা নয়। ভরা বর্ষায় ক্রমাগত বৃষ্টি হতে থাকে। রাস্তার খানাখন্দ বা কোনও ভাঙা ও খোলা জায়গা জলে ডুবে যায়। তার উপর দিয়ে জলের স্রোত বয়ে যেতে থাকে। যখনই জল স্রোতে বয়ে যায়, মশার লার্ভাগুলোও এর সঙ্গে ধুয়ে চলে যায়। সেগুলো জমতে পারে না, মরে যায়। কিন্তু এ বছর কখনও বৃষ্টি, কখনও রোদ। এতে রাস্তার গর্ত, ছোট নালা, ডোবা ইত্যাদি জায়গায় জল জমে থাকছে। অর্থাৎ যে সব জায়গায় জল জমছে, সেখান থেকে জলটা উপচে পড়ার বা বয়ে চলে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। এই কারণে এ বছর মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি।

কিন্তু গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছরই রাজ্যে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা যায়। এমনকী ভরা বর্ষাতেও ডেঙ্গি আক্রান্ত হন। কিন্তু ভরা বর্ষার ক্ষেত্রে বর্ষা শুরুর মুখে এবং বর্ষা পরবর্তী সময়ে বেশি ডেঙ্গির প্রকোপ লক্ষ্য করা যায়। তার কারণ বর্ষা শুরুতে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়। তারপর ভরা বর্ষায় জল বয়ে যায়। তখন মশার ঘনত্ব কমে যায়। আবার বর্ষার বিদায়ের সময়, শরতে কখনও রোদ, কখনও বৃষ্টি হতে থাকে।

 

একটা সময় ছিল যখন ডেঙ্গি শহরের রোগ ছিল। কারণ শহরেই সবচেয়ে বেশি পলিথিন ব্যাগ, প্লাস্টিকের কৌটো, মগ, বালতি, কাগজের কাপ, টিনের পাত্র, টায়ার ইত্যাদির ব্যবহার ছিল। ধীরে-ধীরে নগরায়ন এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় ডেঙ্গির মতো রোগ শহরতলি, গ্রাম-গঞ্জ, মফস্বলে ছড়িয়েছে। ডেঙ্গি এখন চারিদিকে ছড়িয়ে গিয়েছে—শহর আর গ্রামের কোনও তফাৎ নেই। আর এর জন্য দায়ী প্লাস্টিক এবং নানাবিধ ডিসপোজ়েবল দ্রব্য, যেসব জিনিসের মধ্যে জল রেখে দেওয়ার সহজাত প্রবণতা রয়েছে অনেকেরই। ভরা বর্ষা না আসার কারণে হয়তো মশার লার্ভা ধুয়ে চলে যেতে পারছে না। কিন্তু রাস্তাঘাটে, বাড়ির আশেপাশে আবর্জনা স্তূপ মশাকে সুযোগ করে দিচ্ছে বংশবৃদ্ধি করার। চায়ের দোকানের ডাস্টবিনে দিনের পর দিন ধরে দুধের প্যাকেট, চায়ের ভাঁড়, কাগজের কাপে জল জমে থাকছে। বাড়ির টবের গোড়ায় বা থালায় জল জমে থাকছে। পরিত্যক্ত টায়ারে জল জমছে। পুজোর প্যান্ডেল তৈরি করার জন্য রাস্তায় গর্ত করা হচ্ছে, সেখানেও জল জমছে। এগুলোই মশা বৃদ্ধির কারণ।

বৃষ্টির জল ছাড়াও মানুষ নিজেই আবর্জনা স্তূপে জল জমতে সাহায্য করছে। থার্মোকলের প্লেট, বাটি, প্লাস্টিকের গ্লাস, কাগজের কাপ, দুধের প্যাকেট, চিপসের প্যাকেট, ভাঙা মগ, বালতি, গামলা, টিনের কৌটো এই ধরনের যে কোনও পাত্র—যার জল ধরার ক্ষমতা রয়েছে—সেখানে ৭-১০দিন জল জমে থাকলেই মশার উপদ্রব বেড়ে যাবে। এই ধরনের কোনও জিনিস জমিয়ে রাখা যাবে না। এমনকী ফ্রিজের ট্রে-তে জল জমলেও ঘরে মশা বাড়বে।

অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ

Next Article