ঠোঁট স্পর্শ করে থাকা ধূমায়পান চায়ের কাপ, কখনও বিস্কুট দু-একটা— তবেই তো দিন শুরু নিখুঁতভাবে। চা হীন একটা সকাল কখনও স্বাভাবিকভাবে শুরু হতেই পারে না। চা আমরা অনেকরকমভাবে বানিয়ে খাই। কেউ কেনেন চা পাতা, কেউ আবার ছাঁকনি ধোওয়ার ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করেন টি ব্যাগ। আর এখানেই সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, টি ব্যাগ নিয়ে সাবধান হওয়ার সময় সমাগত। তাঁরা বলছেন, সাধারণ দর্শন টি ব্যাগের ব্যবহার ভালোর চাইতে কিন্তু খারাপই করছে বেশি। কীভাবে? মন্ট্রিয়ালের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক গবেষক দ্বারা পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, একটি প্লাস্টিকের টি ব্যাগ থেকে চায়ের কাপে অসংখ্য ক্ষতিকর দ্রব্য মিশে যেতে পারে। এমনকী একটি ৫ মিলিমিটারের কম আকারের প্লাস্টিক টি ব্যাগ থেকে ৫ মিনিটের মধ্যে চায়ের কাপে মিশে যেতে পারে অতি ক্ষুদ্রাকার ১১.৫ বিলিয়ন ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ৩.১ মিলিয়ন ন্যানোপ্লাস্টিক। বুঝতেই পারছেন বিষয়টা কতখানি গুরুতর।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং পুষ্টিবিদরা বলছেন, উষ্ণ জলের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্লাস্টিকের টি ব্যাগ থেকে নির্গত হতে থাকে ওইসমস্ত ক্ষতিকর উপাদান। নাইলনের টি ব্যাগগুলি পলিপ্রোপোলিনের সবচাইতে বৃহৎ উৎস। এমনকী কাগজের তৈরি টি ব্যাগগুলিতেও একটি বিশেষ ধরনের উপাদানের প্রলেপ দেওয়া থাকে। এই রাসায়নিকটির নাম এপিক্লোরোহাইড্রিন। কাগজের টি ব্যাগের আকার অটুট রাখতেই এই রাসায়নিকের প্রলেপ দেওয়া হয়। উষ্ণ জলের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে এপিক্লোরোহাইড্রিন জলে মিশে যায়। এপিক্লোরোহাইড্রিন কার্সিনোজেনিক বা ক্যান্সার সৃষ্টি করতে সক্ষম বলেই জানা গিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আরও জানাচ্ছেন, রাসায়নিকটি এতটাই ক্ষতিকারক যে শরীরে বিভিন্ন ধরনের হরমোনের ভারসাম্যেও ব্যাঘাত ঘটাতে সক্ষম। আমাদের মনে রাখতে হবে, হরমোনের গণ্ডগোলে দেখা দিতে পারে একাধিক অসুখ যেমন ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের সমস্যা। বিশেষ করে মহিলাদের শরীরের হরমোনের ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটলে হতে পারে পিসিওডি, আগাম মেনোপজ, এমনকী বন্ধ্যাত্বও! এন্ডোমেট্রিয়াসিসের সমস্যা থাকলে তা আরও খারাপ আকার নিতে পারে হরমোনের ভারসাম্যজনিত গণ্ডগোলে।
অন্যান্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, ‘শুধু এপিক্লোরোহাইড্রিনই নয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডায়োক্সিনের প্রলেপও দেওয়া হয় টি ব্যাগে। উষ্ণ জলের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে উপাদানগুলি জলে মিশে যায়। ওই পানীয় পান করলে রাসায়নিকরগুলি মানবদেহে প্রবেশ করে এবং বিভিন্নভাবে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। উপাদানগুলি ভয়ঙ্কররকম বিষাক্ত। এমনকী ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ায়।
প্রশ্ন হল তাহলে করণীয় কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘ঝুঁকি এড়াতে টি ব্যাগ বাদ দিন। সিটিসি বা পাতা চা সরাসরি জলে ফুটিয়ে তার পর ছেঁকে পান করাই শ্রেয়।’