বসন্তকাল মানেই সর্দি-কাশি-জ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধি। তবে ঘরোয়া টোটকা হিসেবে আদা (Ginger) হল আমাদের পরমসঙ্গী। আদাতে রয়েছে জিঞ্জেরল ও শোগাওলের মতো বেশ কিছু যৌগ যার মধ্যে অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরির প্রভাব রয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আদার রস (Ginger Juice) ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করার ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া ইমিউন সিস্টেমকে (Immune System) জাগিয়ে তুলতে, সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও আদার নির্যাস বেশ কার্যকরী। শুকনো আদার গুঁড়োও মরসুমি ফ্লুয়ের উপসর্গ থেকে মুক্তি পেতে পারে।
বৈদিক যুগ থেকে আদার ভেষজ গুণের জন্য বহু পরিচিত। ভারত, চিন-সহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে আদা প্রচুর পরিমাণে ফলে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে প্রাচীন মশলার পথ ধরে এর গুরুত্ব আরও বেড়ে গিয়েছে। আয়ুর্বেদ ও প্রাচীন চিনা ঔষধিগ্রন্থে আদার অংসখ্য গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর বহুমুখী স্বাস্থ্য উপকারিতা ছোট থেকে বুড়ো সকলের কাছেই গ্রহণযোগ্য।
কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য: দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ এথেরোস্ক্লেরোসিসের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরে ব্লকেজ তৈরি হয়, যার কারণে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুকিঁ বাড়িয়ে দেয়। আদার মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যের জেরে রক্ত প্রবাহ থাকে স্বাভাবিক, রক্তনালী প্রশস্ত করে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আদার গুণের জেরে কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, জিঞ্জেরল থাকায় অস্বাভাবিক রক্তজমাট বাঁধাও প্রতিরোধ করে।
ডায়াবেটিস ও কিডনি
আদার মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেটিভ ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ থাকায় ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করে থাকে। টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহের কারণগুলি চিহ্নিত করে প্রশমিত করার ক্ষমতা রয়েছে এই আদার রসে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, জিঞ্জেরল থাকায় ইনসুলিন ব্যবহার না করেই পেশিকোষে গ্লুকোজ গ্রহণ বৃদ্ধি করতে পারে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে।
অন্ত্রের স্বাস্থ্য: আদার অ্য়ান্টি-ইনফ্লেটেরি বৈশিষ্ট্য থাকায় পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি করা ও ডায়ারিয়ার মতো সমস্যার সমাধান করতে পারে। আদা হজমের জন্য বেশ উপকারী। ভাল হজমশক্তি উন্নত করতে ও পুষ্টি শোষণের জন্য সাহায্য করে।
কখন আদা খাবেন না? আদা রক্ত পাতলা কার মতো শক্তি রাখে। গর্ভাবস্থায় বেশিমাত্রায় আদা খাবেন না। অনেকের গলব্লাডার কনট্রাকশন থাকতে পারে, তারা আদার খাবেন না। আদার রস খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন। বিশেষ করে যাঁরা স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘস্থায়ী ওষুধের উপর নির্ভর করছেন, তা খুব সাবধানে থাকুন।