সবই করছেন, কিন্তু শরীর থেকে ক্লান্তি আর কাটছে না। সবসময়ই মনে হচ্ছে অসুস্থ। মানসিক চাপ। স্ট্রেস (Stress)। এই কথাগুলো এখন দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে লেপটে গিয়েছে। কাজের জায়গায় বা ব্যক্তিগত কারণে, স্ট্রেসের কারণে আমরা সবসময়ই একটা মানসিক অসুস্থতার (Mental stress) মধ্য়ে দিয়ে বয়ে চলেছি। বড়দের চাপের কথা শুনতে শুনতে বাড়ির সবচেয়ে খুদে সদস্যের মনের কথা জানতে আমরা ভুলে যাই। আজকালযুগের শিশুদের জীবন (Childhood) একটা খাঁচার মত। পড়াশোনার চাপ বা অন্য কোনও কিছুতে নিজেকে সেরা বলে প্রমাণিত করার চাপ দেওয়ার ফলে তাদের মনের অন্তরালে চাপ পড়তে থাকে। তাদেরও হতাশা, টেনশন, উদ্বেগ গ্রাস করে।
আজকের দিনে ইঁদুর দৌড় শুরু হয় ২ বছরের পর থেকেই। তাই তাদের মানসিক চাপের অবস্থা বোঝার বয়স হয়ত বড়দের নাও হতে পারে। কিন্তু তাদের মানসিক চাপ বা মানসিক ট্রমার প্রভাব যে কতখানি তা হয়ত অনেকেই জানেন না। নিষ্পাপ শিশুরা গুণ্ডামি করবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই চাপ যদি ছোট থেকেই পড়তে শুরু করে তাহলে তা ওই খুদের জীবনের জন্য বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
সম্প্রতি একটি তিন বছরের মেয়ের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে জীবনের ভয়ংকর ঘটনা। স্কুলে নির্যাতনের ট্রমায় তার মাথা থেকে সমস্ত চুল গিয়েছে উঠে! এমন অবস্থায় মেয়েটির মধ্যে ফের আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মানের বীজ রোপন করতে দেওয়া হয়েছে পরচুলা। কিন্তু সেই মাথায় টাক ঢাকার অস্ত্র তো দেওয়া হল, কিন্তু তার মনের অবস্থার কথা কজন শুনেছে? এমন মারাত্মক পরিণতির কথা উঠে এসেছে মেট্রো ইউকে রিপোর্টের পাতায়।
মিস লিটল (নাম পরিবর্তিত) হঠাত করে অপরিবর্তনীয় অ্যালোপেসিয়া অ্যারেটাতে ভুগতে শুরু করে। এই একই রোগ রয়েছে হলিউড হাঙ্ক উইল স্মিথের স্ত্রী এবং অভিনেত্রী জাদা পিঙ্কেট স্মিথের। তবে এখানেই রয়েছে পার্থক্য। এই শিশুটির জীবনে ঘটেছে ভয়ংকর ঘটনা। কারণ স্কুলে তাঁকে নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল। সে প্রায়ই কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফেরাপ জন্য অনুরোধ করত। তারপর তাকে একটা সেলের মধ্যে রাখা হত। তারপর তাঁর মাকে ফোন করে ডেকে আনা হত।
মার্কিন স্কুলছাত্রীর মায়ের কথায়, তিনি যখন স্কুলে যান তখন স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সেই নির্যাতন বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ততদিন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। শিশুটির সম্পূর্ণভাবে চুলের ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। মানসিক ট্রমার কারণে চুল ও ত্বকের উপর কতটা প্রভাব ফেলে তা বিশেষজ্ঞরাই বলতে পারবেন। তাঁদের মতে,
– মাথায় টাক পড়ে যাওয়া একটি অসুখ। কিন্তু নির্যাতন করে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে মাথায় চুল উঠে যাওয়ার অসুখকে বলে অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা। একটি শিশুকে যদি দিনের পর দিন ধরে আঘাত ও নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়, তাহলে চুল পড়া ও অ্যালোপেসিয়ার কারণ হতে পারে।
– এই চুল পড়ে যাওয়ার পর আবার তা পূর্ববস্থায় ফেরানোর জন্য রয়েছে ব্যায়বহুল চিকিত্সা।
– কোনও শিশু মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছে কিনা, বা তার দৈনন্দিন জীবনে কিছু পরিবর্তন এসেছে কিনা বা আচরণে বদল ঘটেছে কিনা তা বাবা-মায়েদেরই প্রথমে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু এমন ঘটনার সাক্ষী থাকলে এদেশেও তা বন্ধ করা উচিত।