অ্যালকোহল সেবনে যে ধরনের রোগ সবচেয়ে বেশি দেখা যায় তার মধ্যে অন্যতম হল ফ্যাটি লিভার। যখন অ্যালকোহলের কারণে লিভারে ক্ষতি হয় তাকে ডাক্তারি ভাষায় ‘অ্যালকোহল রিলেটেড লিভার ডিজ়িজ’ বা ARLD বলে। এটাও এক ধরনের ফ্যাটি লিভারই। মূলত অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা আমাদের মধ্যে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। সেখানে কেউ যদি অনিয়মের সঙ্গে এবং অত্যধিক পরিমাণে অ্যালকোহল সেবন করেন তাঁর ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। আর যদি পুরোপুরি ভাবে মাদক আসক্ত হয়ে যায় তাহলে এই ঝুঁকিটাই মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আসলে লিভার রক্তে থাকা অ্যালকোহলকে দূর করে রক্তকে পরিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে। সুতরাং, অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যালকোহল সেবন করলে খুব স্বাভাবিকভাবেই লিভারের উপর চাপ বেশি পড়ে। ফলে, লিভারকেও অতিরিক্ত কাজ করতে হয় এবং এর জন্য লিভারের কোষগুলির মারাত্মক ক্ষতি হয়। ধীরে ধীরে লিভারে মেদ জমতে শুরু করে এবং এই অবস্থাকেই ‘অ্যালকোহল রিলেটেড লিভার ডিজ়িজ’ বলে। তবে, অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে অ্যালকোহল রিলেটেড লিভার ডিজ়িজের পাশাপাশি লিভার সিরোসিস, অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিসের মতো রোগও দেখা দেয়।
বর্তমানে ভারতের বর্তমান জনসংখ্যার প্রায় ১২-১৫ শতাংশ মানুষ এই ফ্যাটি লিভারের সমস্যার ভুগছেন। আজ পাঁচ জনের মধ্যে একজন মানুষ ফ্যাটি লিভারের বিষয় নিয়ে চিন্তিত। আজ যেভাবে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজ়িজের সমস্যা দেখা দিচ্ছে, একই ভাবে বেড়েছে লিভার সিরোসিসের সমস্যা। কিন্তু সমস্যা হল, অ্যালকোহল রিলেটেড লিভার ডিজ়িজের উপসর্গগুলো প্রথমদিকে সহজে ধরা পড়ে না। এর লক্ষণ পুরোপুরি প্রকাশ পায় তখনই যখন লিভার পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
বেশির ভাগ মানুষের প্রশ্ন: সামান্য পরিমাণ মদ্যপান করলেও কি অ্যালকোহল রিলেটেড লিভার ডিজ়িজের ঝুঁকি রয়েছে? অতিরিক্ত পরিমাণে মদ্যপান ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, সামান্য পরিমাণ অ্যালকোহলে কোনও সমস্যা তৈরি হবে না। মাত্রাতিরিক্ত না হলেও অল্প পরিমাণ অ্যালকোহল সেবনেও লিভারের উপর চাপ পড়ে। কিন্তু যাঁরা নিয়মিত বা প্রতিদিনই ৪০ মিলিলিটার করে মদ্যপান করেন, তাঁদের মধ্যে অ্যালকোহল রিলেটেড লিভার ডিজ়িজের সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। প্রতিদিন ২ পেগের বেশি মদ খাওয়ার অর্থই হল আপনি নিজের জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছেন।
এই রোগের ঝুঁকি এড়ানোর সবচেয়ে ভাল উপায় হল মদ্যপান এড়িয়ে যাওয়া। কিন্তু কোনওভাবে যদি আপনি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন তাহলে উপসর্গ চিনবেন কীভাবে? ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হলে লিভার ফুলে যাওয়া, তলপেটের ডান দিকে অস্বস্তি, ক্লান্তি, ওজন কমে যাওয়া, খিদে কমে যাওয়া, বমি বমি ভাব, চোখ ও ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া, গোড়ালি ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গগুলো প্রকাশ পায়। আপনি যদি মদ্যপান করেন এবং এই লক্ষণগুলির মধ্যে একটিও যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।