চিকিৎসকদের হাতের লেখা নিয়ে সারা দেশেই নানা ধরনের ঠাট্টা প্রচলিত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, ওষুধ খেয়ে সেরে ওঠার পর ধন্যবাদটা চিকিৎসককে নয়, বরং ফার্মাসিস্টকে দেওয়া উচিত। কারণ চিকিৎসকদের দুর্বোধ্য লেখা পড়ে সঠিক ওষুধ নির্বাচন করার কাজ মহান কৃতিত্বের মধ্যেই পড়ে! এখানেই শেষ নয়। কেউ কেউ বলেন, যারা চিকিৎসকদের জড়ানো লেখা দেখেও নির্ভুলভাবে ওষুধ নির্বাচন করতে পারেন তিনি দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করার ক্ষমতা রাখেন। কারণ দুরূহ মেসেজ ‘ডি কোড’ করার পদ্ধতি তাঁর জানা আছে। এভাবেই হাতের লেখা নিয়ে চিকিৎসকদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। তবে এই ধরনের দুর্নামকে স্ট্রেট শটে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছেন এক চিকিৎসক। জানা যাচ্ছে ওই চিকিৎসক কেরালার বাসিন্দা। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ওই চিকিৎসকের একটি হাতে লেখা মেডিকেল প্রেসক্রিপশন ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রেক্রিপশনের ছবিটি দেখা মাত্র সকলের মুখ বিস্ময়ে হাঁ হয়ে যাচ্ছে। প্রেসক্রিপশনে ওষুধের নাম লেখা রয়েছে স্পষ্ট অক্ষরে। চিকিৎসকের মুক্তো ঝরানো হাতের লেখার ভক্ত হয়ে উঠেছেন সবাই।
মেডিকেল প্রেসক্রিপশনের যে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে সেটি লিখেছেন কেরালার ডাঃ নিতিন নারায়ণন। তবে প্রেসক্রিপশনটি ভাইরাল হতেই সমস্যায় পড়েছেন অন্যান্য চিকিৎসকরা। অসংখ্য রোগী তাঁদের পরিচিত চিকিৎসককে প্রেসক্রিপশনে ডাঃ নিতিন নারায়ণনের মতো হাতের লেখায় ওষুধের নাম লিখতে অনুরোধ করছেন যাতে রোগীরা সহজেই বুঝতে পারে ওষুধ সম্পর্কে। জানা গিয়েছে, ডাঃ নিতিন নারায়ণন গত তিন বছর ধরে পালাক্কাড়ের নেনমারার একটি কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে কাজ করছেন।
ডাঃ নিতিন নারায়ণনের ওই চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্রটি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন বেন্সি এসডি নামের এক ব্যক্তি। প্রেসক্রিপশনের ছবির সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন একটি দীর্ঘ পোস্ট। তাতে লেখা হয়েছে, ‘প্রেক্রিপশনটি কেরালার চিকিৎসক নিতিন নারায়ণনের হাতের লেখা।’ অসংখ্য নেটিজেন পোস্টটিতে লাইক দিয়েছেন। শেয়ার করেছেন ঝড়ের গতিতে।
পোস্টের নীচে মন্তব্য করতে গিয়ে এক নেটিজেন লিখেছেন— ‘এই হাতের লেখা দেখে আমি হতবাক।’ আর এক ব্যবহারকারী লেখেন, ‘মনে হচ্ছে প্রিন্টিং মেশিন থেকে বের হয়েছে প্রেসক্রিপশন।’
এসেছে আরও মন্তব্য যেমন— ‘সত্যিই এটি একটি খুব সুন্দর হাতের লেখা।’
ডাঃ নারায়ণন ত্রিশুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করেছেন এবং জওহরলাল ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিকেল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (জেআইপিএমইআর) থেকে এমডি করেছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি আমার প্রেসক্রিপশনে ওষুধের নাম বড় অক্ষরে লিখি। অন্যান্য ডাক্তারদের হাতের লেখা আপনার কাছে অদ্ভুত মনে হয় কারণ ব্যস্ততার কারণে তাঁদের দ্রুত লিখতে হয়।’ তিনি আরও জানান, তিনি চেষ্টা করেন ওষুধের সুন্দরভাবে লেখার। রোগীরা প্রায়ই তাঁর হাতের লেখার প্রশংসা করেন।
তিনি আরও বলেন— ‘ছোট বেলায় চারটি লাইন টানা নোটবুকে হাতের লেখা অভ্যেস করাতো আমার দিদি। আমি লিখতে ভালোবাসি। তাই প্রেসক্রিপশনে ওষুধের নাম লেখার সময়েও আমি ব্লক লেটার ব্যবহার করি।’
ফার্মাসিস্টদের কাছে তাঁর হাতে লেখা প্রেসক্রিপশন পড়া সহজ হয় কি? এই প্রশ্নের উত্তরে বিনয়ী চিকিৎসক জবাব দেন— ‘ফার্মাসিস্টরা বহু চিকিৎসকের হাতে লেখা প্রেসক্রিপশন দেখেন। তাঁরা এই সব ব্যাপারে অভ্যস্ত। তাঁদের কাছে আমার প্রেসক্রিপশন ও বাকি চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশনের মূল্য একই।’