গ্রীষ্মের খর বেলায় ঠান্ডা শরবত পানের মজাই আলাদা! অনেকে আবার গরমকালে কোল্ড ড্রিংকস পান করতেও ভালোবাসেন। তবে এই ধরনের পানীয় অনেকক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যকর হয় না। বিশেষ করে সফট ড্রিংকসে থাকে প্রচুর মাত্রায় ক্যালোরি আর ফ্যাট। অথচ আমাদের হাতের কাছেই এমন এক দেশীয় পানীয় রয়েছে যা পান করলে তরতাজা তো লাগেই, তার সঙ্গে মেলে একাধিক স্বাস্থ্যগুণ। বাটারমিল্ক বা ছাঁচ হল এমনই এক পানীয়। ছাঁচ পানের পরেই শরীর ধীরে ধীরে ঠান্ডা হতে থাকে। শরীর ও মনে মেলে প্রশান্তি। এই চমৎকার পানীয়টি তৈরি করাও সোজা। দুধ থেকে মাখন তৈরির পর যে অংশটি বেঁচে থাকে তা দিয়েই বানিয়ে নেওয়া যায় সুস্বাদু এবং উপকারী পানীয়টি। এই পানীয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোবায়োটিক যা হজম ক্ষমতা যেমন বাড়ায় তেমনই বহু রোগও দূরে রাখে। প্রশ্ন হল, আর কী কী উপাদান রয়েছে বাটার মিল্ক-এ যার কারণে পুষ্টিবিদরা বারংবার ছাঁচ পানের পক্ষে সওয়াল করছেন? দেখা যাক।
পুষ্টিবিদরা বলছেন বাটার মিল্ক-এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। ফলে বাটার মিল্ক পানে পেশির জোর বাড়ে। এছাড়া শরীরে কোনও ক্ষত তৈরি হলে তা দ্রুত পূরণ করতেও সাহায্য করে। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে। এছাড়া ছাঁচে রয়েচে যথেষ্ট মাত্রায় ক্যালশিয়াম। ফলে নিয়মিত বাটার মিল্ক পানে হাড় ও দাঁতের জোর বাড়ে। এক গ্লাস বাটার মিল্ক –এ থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোবায়োটিক বা উপকারী ব্যাকটেরিয়া। ফলে যে কোনও খাদ্য দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে। এছাড়া প্রবায়োটিক কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে। দূর করে কোষ্ঠ্যকাঠিনের সমস্যাও। আর কী রয়েছে বাটারমিল্ক-এ? আছে চোখের পক্ষে উপকারী ভিটামিন এ। আর আছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করতে, কিডনি ভালো রাখতে, ফুসফুসের ক্ষমতা বৃদ্ধির উপযোগী বেশ কিছু খনিজ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন এক গ্লাস ছাঁচ খেলে হারানো স্বাস্থ্য যেমন দ্রুত ফিরে পাওয়া যাবে, তেমনই রোগবালাইও পালানোর পথ পাবে না। ডায়েটিশিয়ানরাও বারং বার বাটার মিল্ক পান করতে বলছেন এই গ্রীষ্মে। কারণ, বাটার মিল্ক-এ রয়েছে বি ভিটামিন যেমন রাইবোফ্ল্যাভিন যা দেহে প্রোটিনকে কাজে লাগাতে সাহায্য করে।
দুধের বিকল্প?
বহু লোকের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকে। ফলে দুধ খেলেই তাঁদের ডায়ারিয়া হয়। এই ধরনের লোকেরা ক্যালশিয়াম এবং প্রোটিনের অভাবে ভুগতে পারেন। এমন ব্যক্তিদের জন্য দুধের বিকল্প খাদ্য হল ছাঁচ। কারণ ছাঁচে ল্যাকটোজ থাকে না। অথচ প্রোবায়োটিক থাকার কারণে ছাঁচ হজম করতে কোনও সমস্যাই হয় না। এছাড়া ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকায় অম্বলের সমস্যাও প্রতিহত করে। তাই খাবার খাওয়ার একঘণ্টা বাদে একগ্লাস ছাঁচ অবশ্যই পান করুন। বাচচা তো বটেই, বয়স্করাও নিশ্চিন্তে ছাঁচ খেতে পারেন।
কোলেস্টেরল কমায়!
হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য বাটার মিল্ক-এর কোনও বিকল্প নেই। কারণ হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী থাকে যে কোলেস্টরল তার মাত্রা কমাতে পারে নিয়মিত বাটার মিল্ক-এর সেবন। কারণ ১০০ গ্রাম বাটার মিল্ক-এ থাকে মাত্র ০.৫ গ্রাম স্যাচুরেটেড ফ্যাট। দুধে কিন্তু ফ্যাটের মাত্রা থাকে অনেক বেশি। ফলে দুধের বদলে ছাঁচ পান করলে দেহে ফ্যাট প্রবেশ করে সামান্য। পেটও ভরতি থাকে। তাই যখনতখন উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত উলটোপালটা খাদ্য, ভাজাভুজি খাওয়াও কম হয়। ফলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে না। এছাড়া ফ্যাটের মাত্রা কম থাকার জন্য ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
কীভাবে বানাবেন ছাঁচ?
উপাদান
ক্রিম, জল, পুদিনা পাতা, ধনে গুঁড়ো, বিট নুন, আদা, গোলমরিচ।
পদ্ধতি
এক কাপ ক্রিম নিয়ে তা এক গ্লাস জলে ঢেলে চামচ দিয়ে গুলতে থাকুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্রিম থেকে ফ্যাট অংশটি আলাদা হয়ে জলের উপরে ভেসে উঠবে। ওই ফ্যাট বাদ দিয়ে বাকি অংশ ছেঁকে নিন। এই হল আপনার বাটার মিল্ক। এবার ওই বাটার মিল্ক-এর সঙ্গে মিশিয়ে নিন পুদিনা পাতা, ধনে গুঁড়ো, বিট নুন, আদা, গোলমরিচ। গ্রীষ্মের দুপুরে দু’কুচি বরফ দিয়ে নিশ্চিন্তে পান করুন।