সাধারণভাবে, আমরা জানি, স্তন ক্যান্সার (Breast Cancer) মহিলাদেরই হয়। অথচ, জানলে অবাক হবেন, বহু পুরুষই স্তন ক্যান্সারে (Male Breast Cancer) আক্রান্ত হন। এমনকী মহিলাদের মতোই পুরুষের ব্রেস্ট ক্যান্সারের সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে! মহিলাদের মতো পুরুষদের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রকোপ সেভাবে দেখা যায় না ঠিকই তবে বিষয়টি একেবারেই অবাস্তব নয়। পুরুষের ব্রেস্ট-এর কোষে এই ধরনের ক্যান্সার হয়। সাধারণত অস্বাভাবিক ধরনের জিনের উপস্থিতির কারণে এমন সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন পুরুষরা (Male)। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বয়স্ক পুরুষের এমন সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে। অবশ্য চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা গেলেও যে কোনও বয়সে ব্রেস্ট ক্যান্সার আক্রমণ করতে পারে ছেলেদের। ফলে সব বয়সের পুরুষেরই ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
প্রশ্ন হল, পুরুষের ব্রেস্ট ক্যান্সার কেন হয়? পুরুষের ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার পিছনে কারণ সম্পর্কে চিকিৎসকরা পুরোপুরি নিশ্চিত নন। তবে নানা গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ব্রেস্ট-এর কোষগুলি অস্বাভাবিকভাবে বিভাজিত হতে থাকলে তা টিউমার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। এরপর ওই টিউমার দ্রুত শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
পুরুষ স্তন ক্যান্সারের উপসর্গ
• স্তনের উপর লাম্প বা ফোলা অংশ তৈরি হতে পারে।
• ব্রেস্ট-এর ত্বকের রঙে পরিবর্তন ঘটতে পারে। এমনকী ত্বকের প্রকৃতিরও পরিবর্তন ঘটার মতো লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
• স্তনবৃন্তের চারপাশে আঁশ ওঠার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। স্তনবৃন্তের চারপাশ লাল হয়ে যেতে পারে।
• স্তনবৃন্ত থেকে সাদা অথবা বর্ণহীন রস বেরতে পারে।
বিভিন্ন ধরনের ব্রেস্ট ক্যান্সার
বয়ঃসন্ধির সময়ে, মহিলাদের স্তনে তৈরি হয় দুগ্ধগ্রন্থি এবং মেদ কলা। পুরুষদের ক্ষেত্রে কিন্তু এমনটি ঘটে না। ফলে মহিলাদের তুলনায় পুরুষের ব্রেস্ট আকারে ছোট হয়।
পুরুষের ব্রেস্ট ক্যান্সারের একাধিক ধরন রয়েছে—
মিল্ক ডাক্ট ক্যান্সার: অসুখটি ডাক্টাল কার্সিনোমা নামেও পরিচিত। পুরুষের যে সব ব্রেস্ট ক্যান্সার হয় তাদের মধ্যে সবচাইতে পরিচিত ক্যান্সার হল মিল্ক ডাক্ট ক্যান্সার।
মিল্ক গ্ল্যান্ড ক্যান্সার: পুরুষের স্তনে কোনওরকম দুগ্ধগ্রন্থি তৈরি না হলেও, এই ধরনের ক্যান্সার পুরুষের বুকের লোব বা বিশেষ অংশকে আক্রান্ত করে।
স্তনবৃন্ত ক্যান্সার: নিপলে প্রদাহ দেখা যায়।
কাদের ঝুঁকি বেশি?
বয়স বাড়ার সঙ্গে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
ইস্ট্রোজেন বৃদ্ধিকারক ড্রাগ ব্যবহার করলে পুরুষের স্তন ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। কারণ সেক্ষেত্রে শরীরে হর্মোনের ভারসাম্যের ব্যাঘাত ঘটে। ফলে তা ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কাও বাড়িয়ে তোলে। বংশে কোনও পুরুষের ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ইতিহাস থাকলে ওই বংশের সুস্থ পুরুষ সদস্যটির ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লিভার সিরোসিস হলে দেহে পুং হর্মোনের ভারসাম্যের ব্যাঘাত ঘটে। তার ফলেও ব্রেস্ট ক্যান্সারের আশঙ্কা বাড়তে পারে।
চিকিৎসা
ক্যান্সারের পর্যায় ও প্রকৃতির উপর নির্ভর করে চিকিৎসা। ম্যাস্টেকটমি সার্জারি, রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি, হর্মোনাল থেরাপি, টার্গেটেড সেল থেরাপির মতো একাধিক চিকিৎসা রয়েছে। তাই ছোটখাট উপসর্গ দেখা দিলে সতর্ক হন। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।