মারাত্মক জ্বর। গা হাত পায়ে লাল লাল ফুসকুড়ি। চোখও মারাত্মক লাল। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে জানা যাচ্ছে সন্তান হামে আক্রান্ত। ২০২২-এ রাজ্যে দ্বিগুণ হয়েছে হাম আক্রান্তের সংখ্যা। গত এক দশকের রেকর্ড প্রায় ভেঙে দিয়েছে এবছর হামে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। তাই হাম বা মিসলসের টিকাকরণের জন্য কোমর বেঁধে নামতে চলেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর।
কোভিড আবহে গত দু’বছর মুখ থুবড়ে পড়েছিল নানা টিকাকরণ। তার মধ্যে ছিল হাম এবং রুবেলার টিকাকরণও। আর এতেই রাজ্যে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে গয়েছে হামে আক্রান্তের সংখ্যা। সাধারণত ন’মাস বয়সেই শিশুদের হামের প্রথম টিকা দেওয়া হয়। দ্বিতীয় টিকা দেওয়া হোক ১৫ মাস বয়সে। পাশাপাশি হামের টিকাকরণ অত্যন্ত জরুরি।
হামের পিছনে মরবিলি ভাইরাস দায়ী। হামের প্রভাবও মারাত্মক। এই ভাইরাস ঘটিত রোগ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। হাম থেকে সুস্থ হয়ে উঠলেও শরীর দুর্বল হয়ে থাকে। পাশাপাশি এই অবস্থায় শরীরে অন্যান্য সংক্রমণ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। হামের আর একটি ক্ষতিকারক দিক হল এই রোগ ছোঁয়াচে। আক্রান্তের নাক-মুখ থেকে বেরনো সূক্ষ্ম জলকণা অর্থাৎ হাঁচি, কাশির ড্রপলেটের দ্বারা এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে এই ড্রপলেট পড়বে সেখানে হামের ভাইরাস প্রায় দু’ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। আর এই ভাইরাসকে ঠেকাতে সার্বিক টিকাকরণ জরুরি।
বাংলাতে হামে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। হামের প্রকোপ এড়ানোর জন্যই শিশুদের হামের টিকাকরণে জোর দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্যজুড়ে আগামী ২১ নভেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর হাম (মিজলস) এবং রুবেলা (জার্মান হাম) টিকাকরণ চলবে। ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের এই টিকা দেওয়া হবে।
হামে আক্রান্ত হলে জ্বর-সর্দির পাশাপাশি গায়ে র্যাশের সমস্যা দেখা দেয়। এই র্যাশ চুলকোয় না কিন্তু এগুলো দ্রুত শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এর পাশাপাশি শরীরে অত্যধিক ক্লান্তি থাকে। এছাড়াও যেসব শিশুরা হামে আক্রান্ত হয় তাদের মধ্যে ডায়ারিয়া দেখা দেয়। এই ডায়ারিয়ার সমস্যা পরবর্তীকালে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টিজনিত সমস্যা তৈরি করে। হামের প্রকোপ শিশুদের মধ্যে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি করে। বিশেষত চোখে ভিটামিন এ-এর ঘাটতি দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে হাম থেকে সুস্থ হওয়ার পরও এর থেকে প্যানক্রিয়াটাইটিসের সমস্যা দেখা দেয়। এই সব রোগকে আপনি ঠেকাতে পারেন শুধুমাত্র হামের টিকাকরণের মাধ্যমে।