জামশেদপুর নিবাসী সুফিয়ান আলি। মাত্র ২১ বছর বয়স তাঁর। অথচ মাঝে মাঝেই তীব্র কাশির সমস্যায় ভোগেন তিনি। তাঁর সঙ্গে রক্তপাত। স্বাভাবিক ভাবেই এমন ঘটায় ভয় পেয়ে যান সকলেই। ওষুধ দিয়ে সাময়িক ভাবে রক্তপাত বন্ধ করা গেলেও বন্ধ হয় না কাশির সমস্যা। ৫-৬ মাস অন্তর ফিরে ফিরে আসে এই এক সমস্যা। বড় বড় ইএনটি চিকিৎসকদের দেখিয়েও কোনও কাজ হয়নি। এই সমস্যার শুরু হয় ২ বছর আগে। এর পরেই গত মাসে অবস্থার আরও অবনতি হয়। কাশি, রক্তপাতের সঙ্গে জ্বর এবং অস্বাভাবিক হারে ওজন কমতে থাকে সুফিয়ানের।
কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় সুফিয়ানকে। সেখানে রেসপিরেটারি মেডিসিনের চিকিৎসক অপর্ণা চট্টোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় চিকিৎসা। নানা পরীক্ষা নীরিক্ষার পর দেখা যায়, শ্বাস নালিতে একটি লোহার স্প্রিং আটকে গিয়েছে। এর পরেই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
হাসপাতালে নিয়ে আসার পর, রোগীর লক্ষণ দেখে মনে হয়েছিল যক্ষ্মা হয়েছে। সেই মতো শুরু হয় চিকিৎসা। এন্ডোব্রঙ্কিয়াল আল্ট্রাসাউন্ড (EBUS), ব্রঙ্কোস্কোপি করা হয়। এই পদ্ধতিতে শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে ফুসফুস এবং তার আশেপাশের এলাকার একটি বিশদ চিত্র তৈরি করা হয়। একটি পাতলা নল, শ্বাসনালীর মাধ্যমে শরীরে ঢুকিয়ে শব্দ তরঙ্গ পাঠানো হয়। ফুসফুসের পার্শ্ববর্তী টিস্যু পরীক্ষা করে ক্যানসার বা অন্য কোনও রোগ আছে কিনা ক্ষতিয়ে দেখা হয়। কিন্তু সেই পরীক্ষায় কী হয়েছে জানা না গেলে হাই রেজোলিউশন থোরাক্স স্ক্যান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই রিপোর্টে ২ সেমি লম্বা একটি স্প্রিং আটকে আছে দেখা যায়। শ্বাসনালীতে বাম সাবক্যারিনাল এলাকায় বুকের নীচের একটি জায়গায় আটকে আছে সেই স্প্রিং। ফুসফুসে অক্সিজেন যেতে এই নল সাহায্য করে। এর পরে জটিল অস্ত্রোপচারের সাহায্যে সেই স্প্রিং বার করা হয়।
কিন্তু কী ভাবে দু’বছর ধরে শ্বাসনালীতে এত বড় একটা স্প্রিং গেল তা কিছুতেই মনে করে বলতে পারেননি রোগী বা তাঁর পরিজনেরা।
চিকিৎসক অপর্ণা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ফুসফুসের নিম্ন ভাগে কোনও কিছু আটকে গেলে তা বার করা সহজ নয়। সাধারণ অস্ত্রোপচারে এগুলি বার করা যায় না। একাধিক বারের চেষ্টায় আমরা স্প্রিংটি বার করতে সফল হয়েছি। সামান্য রক্তপাত হয়েছে। রোগীর নিরাপত্তাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।”
সুফিয়ান বলেন, “আমি কখনও কল্পনাও করিনি এমন কিছু ঘটতে পারে। গত মাসে আমার শরীর আরও খারাপ হলে এই বেসরকারি হাসপাতালে আসি। এখানকার ডাক্তাররাই প্রথম আবিষ্কার করেন গলায় আটকে থাকা সূচের মতো কোনও পদার্থই গত ২ বছর ধরে আমার অসুস্থতার কারণ। আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। ডাক্তাররা সফলভাবে সেই বস্তুটিকে বার করেছেন।”