ব্লাড সেল ট্রান্সপ্লান্ট (Blood Stem Cell Transplant) হল এমন একটি চিকিত্সাগত উপায়। এই চিকিত্সা অস্থি মজ্জার (Bone Marrow) কোষগুলিকে প্রতিস্থাপন করে যা কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন দ্বারা নিহত হয়। এই দাতা কোষগুলি বি্ভিন্ন স্থান থেকে নেওয়া যেতে পারে। এই দাতা কোষগুলি থেরাপি ম্যারো দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। রোগীর লিউকোমিয়া (Blood Cancer) যেমন লিম্ফোয়া বা মায়লোমা (ক্যানসার যা প্লাজমা কোষ নামে শ্বেত রক্তকণিকায় তৈরি হয়), সেক্ষেত্রে এই ধরনের পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর। এই ধরনের অবস্থাকে বোন ম্যারো রোগ (Bone Marrow Disease) বলা হয়।
এই পদ্ধতিতে কী বোঝায়?
মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালের শিশুরোগ, শিশুরোগবিদ্যা, অনকোলজি, এবং স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন বিশেষজ্ঞ ড সান্তনু সেন জানিয়েছেন, ‘আমরা কেমোথেরাপির পমূল ডোজটাই দিই। ত্রুটিযুক্ত মজ্জা বের করে ডোনার থেকে থেরাপি ম্যারো দিয়ে প্রতিস্থাপন করি। এই পদ্ধতির আরেকটি সুবিধা হল, সিকেল সেল রোগ বা থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য় এই পদ্ধতিটি অনেক কার্যকর। এই রোগের ক্ষেত্রে অস্থিমজ্জা তৈরি হয় না। কোষের অভাবের কারণ রক্ত। আমরা কেমোথেরাপির মাধ্যমে ত্রুটিযুক্ত মজ্জা অপসারণ করি। একজন সুস্থ দাতার কাছ থেকে থেরাপি ম্যারো দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনও ব্যক্তির ব্লাড ক্য়ানসার হলে মৃত্যুই ছিল পরিণতি। এই পদ্ধতিটিও সঞ্চালিত হওয়ার আগে কোনও নিরাময় ছিল না। দুর্ভাগ্যবশত আজও থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে আমরা যদি ট্রান্সপ্লান্ট করতে না পারি, তাহলে রোগীকে ব্লাড ট্রান্সফিউশন চালিয়ে যেতে হবে।’
‘এই ধরেনর পদ্ধতির সাফল্যের হার বেশ ইন্টারেস্টিং। কারণ দাতা যদি ভাই বা বোনের মত হয়, প্রতিস্থাপনের সাফল্যের হার প্রায় ৯০ শতাংশ। যদি পরিবারের সদস্যদের মধ্য়ে না হন, মানে একজন স্বেচ্ছাসেবী দাতার থেকে প্রাপ্ত কোষ প্রতিস্থাপনের সাফল্যের হার প্রায় ৮৫ শতাংশ। একটি প্রতিস্থাপনের সাফল্যের হার নির্ভর করে কোষগুলি কত দ্রুত সারিয়ে তুলতে পারছে। সাধারণত এটি ১৪-২১ দিন সময় নেয়। এই সময় আমরা একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর একটি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে পারি, রোগী এক বছর পরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। এটা বলা যেতে পারে যে, সারাজীবনের জন্য নিরাময় হয়’ বলে দাবি করেছেন তিনি।
কিডনি ও ব্লাড সেল ট্রান্সপ্লান্টের মধ্যে পার্থক্য আছে কি?
কিডনি ও ব্লাড সেল ট্রান্সপ্ল্যান্ট পদ্ধতির ক্ষেত্রে একটি বড় পার্থক্য রয়েছে। যে সময় রোগীদের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় তাদের আজীবন ওষুধ খেতে হয়। কিন্তু অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনে রোগীরা এক বছরের মধ্যে ওষুধ বন্ধ করে দিতে পারে। তারপরেও স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে যেতে পারে। যদি সেটি আবার ব্লাড ক্যানসার হয়,তাহলে সাফল্যের হার বেশি। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে রোগীরা পুনরায় সংক্রমিত হতে পারেন। যদিও প্রতিস্থাপনের তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ঘটে। রোগী ভাল থাকলে কোনও চিন্তার কারণ থাকে না। এ প্রসঙ্গে ড সেন জানিয়েছেন, প্রতিস্থাপন করেছেন, যে সব রোগী, তাদের জন্য পরামর্শ হল, দুই বছর ধরে নিয়মিত চেকআপের মধ্যে দিয়ে থাকতে হবে। এর পরে রোগীকে সাধারণত পরবর্তী দুই-তিন বছরের জন্য বছরে একবার তার চিকিত্সকের কাছে যেতে বলা হয়।এরপর রোগীর আর কোনও ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না।
বয়স কোনও বাধা হতে পারে না
অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে বয়সের কোনও সীমাবদ্ধতা নেই। চারমাস বয়সি শিশুরাও এই পদ্ধতিতে চিকিত্সা করতে পারে। তাঁর মতে, ‘বয়স কোনও বাধা নয়। আগে আমরা ৬০ বছর বয়সেরও বেশি রোগীর ট্রান্সপ্লান্ট করতাম। কিন্তু প্রযুক্তির গুণে আমরা ৭০ থেকে ৮০ বছর বয়সি রোগীদেরও এখন চিকিত্সা করতে পারি। ট্রান্সপ্লান্ট চলাকালীন রোগীর একটি বিশেষ দিকে নজর রাখতে হয়। তা হল, এই সময় গুরুতর সংক্রমণ হতে পারে। তাই ট্রান্সপ্লান্টটি অত্যন্ত জীবাণুমুক্ত পরিবেশে করা উচিত।’
ডিকেএমএস বিএমএসটি ফাউন্ডেশন ইন্ডিয়ার সিইও প্যাট্রিক পল জানিয়েছেন,’ প্রতি পাঁচ মিনিটে দেশে একজনের ব্লাড ক্যানসার বা রক্তের ব্যাধি যেমন থ্যালাসেমিয়া বা অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া ধরা পড়ে। যদিও ব্লাড ক্যানসার হল জীবনসংশয়পূর্ণ একটি রোগ, একজন দাতার থেকে সুস্থ রক্তের স্টেম সেল মিলে গেলে তা জীবন ফিরিয়ে দিতে পারে। দুরারোগ্য হলেও মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.০৪ শতাংশ সম্ভাব্য রক্তের স্টেম সেল দাতা হিসেবে প্রযোজ্য। জীবনরক্ষাকারী চিকিত্সা হিসেবে স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টের প্রয়োজনীয় রক্ত ৩০ শতাংশ একটি ভাইবোনের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। বাকি ৭০ শতাংশ সম্পর্কহীন দাতার উপরই নির্ভর করতে হয়।’
দাতার কি জীবনে ঝুঁকি রয়েছে?
না, দাতার জন্য জীবনে কোনও ঝুঁকি নেই। স্টেম সেল দাতা হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক ভুল ধারণা এখনও বিদ্য়মান। কিন্তু এটির সেরা দিক হল, একজন ব্যক্তি অন্য়ের জন্য কিছু করতে পারেন। ‘স্বাভাবিক নিয়মিত রক্তদানের জন্য একজন দাতা রক্তদান করেন, ঠিক তেমনি ভাবেই তারা একজনের জন্য দান করেন। দাতাদেরকে সেইদিনেই ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদের কোনও সমস্য়া তৈরি হয় না। প্রক্রিয়াটি স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব থাকে। সেখানেও রয়েছে সমাধান। তাদের শুধু ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। পূর্বে দাতা পরিবারের সদস্য না হলে আমরা মজ্জা গ্রহণ করি না। একটি শিরা থেকে কোষ বের করাহয়। আমরা কখনওই হারের কাছাকাছি পৌঁছাই না। মনে রাখা দরকার, পুরো প্রক্রিয়াটি একটি ব্যথাহীন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়’ বলে জানিয়েছেন ড. সেন।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।