২০২৫ সালের মধ্যে সারা ভারত (India) থেকে ‘যক্ষ্মা নির্মূল মিশন’কে ফের একবার পুনুরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে কড়া পদক্ষেপ নিল সরকার। গত ৯ সেপ্টেম্বর, ‘প্রধানমন্ত্রী যক্ষ্মামুক্ত ভারত অভিযান’-এর (Pradhan Mantri TB-Mukt Bharat Abhiyan campaign) অধীনে মোট ১.৭৮ লক্ষেরও বেশি যক্ষ্মা রোগীকে (TB patients) দত্তক নেওয়ার কথা ঘোষণা করে মন্তব্য রেখেছিলেন দেশের নয়া রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। আগামী শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর এক লক্ষ্যপূরণের মাধ্যমে বড়সর যুদ্ধের মুখোমুখি হতে চলেছে দেশ। ‘নীরব ঘাতক’ হিসেবে এই রোগ ক্রমশ বেড়েই চলেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। বিশেষ করে কোভিড ১৯ দেশে আছড়ে পড়ার পরই এই রোগের আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগের মত বেড়ে চলেছে। প্রসঙ্গত জাতিসংঘের লক্ষ্যমাত্রার পাঁচ বছর আগেই যক্ষ্মামুক্ত অভিযান করে সচেতনতা ও রোগমুক্তি করার চেষ্টা চালাবে ভারত। সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতেই সরকার কমিউনিটি সাপোর্ট প্রোগ্রাম চালু করেছে। যার অধীনে যক্ষ্মা রোগীদের নির্বাচিত প্রতিনিধি বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা দত্তক ও যত্ন নেওয়া যাবে। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশে বর্তমানে চিকিত্সাধীন মাল্টি-ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট-সহ মোট ১৩,৫১,৫৫০ যক্ষ্মা রোগী রয়েছে। তার মধ্যে ৯,০৪,৪২৫ রোগী দত্তক নেওয়ার জন্য সম্মতি পেয়েছে। সরকারের লক্ষ্যে হল আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিনকে মাথায় রেখে সেই রোগীদের দত্তক নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা।
সম্প্রতি দেশের নয়া রাষ্ট্রপতি সকল দেশবাসীর উদ্দেশ্য জানিয়েছিলেন, ‘বিশ্বের অন্যতম সংক্রামক রোগের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক অসুখ হল যক্ষ্মা। দেশ থেকে এই রোগ মুক্ত করতে সবাইকেই একসঙ্গে কাজ করতে হবে, সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। ভারত স্বাস্থ্যসেবা কর্মী,নেতা ও সাধারণ নাগরিকদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় যেমন কোভিড ১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই করে এগিয়ে গিয়েছে দেশ, তেমনি এই গুরুতর সমস্যার সমাধানের জন্যও সারা দেশের ঐক্যতা প্রয়োজন।’
যক্ষ্মা রোগীদের যত্ন ও সেবা করার জন্য এগিয়ে আসা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলিকে ‘নি-ক্ষয় মিত্র‘ বলা হবে। ব্লক, জেলা বা এমনকি একজন রোগীকেও দত্তক নেওয়া যেতে পারে। তাদের পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করা, পুষ্টি জোগানো ও চিকিত্সায় সহায়তা প্রদান করতে পারে। উত্তরপ্রদেশের ‘নিক্ষয় মিত্র’দের অধীনে ইতোমধ্যে ৪,৪১৬জনকে দত্তক নেওয়া হয়েছে। এছাড়া মধ্যপ্রদেশে ২,২৮৬জন ও মহারাষ্ট্রে ৬৪৩জনকে পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সূত্রের খবর, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডবজয় গুজরাতের ভাবনগরের পালিতানা ব্লকের এক যক্ষ্মারোগীকে দত্তক নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। প্রসঙ্গত, ওই এলাকাটি মন্ত্রীর আসলে জন্মভিটেও বটে। পুষ্টি, চিহ্নিতকরণ, পুষ্টি ও চিকিত্সার সম্পূরক ও বৃত্তিমূলক সহায়তা, এই চারটি বিষয়ে বিশেষ করে আলোকপাত করা হচ্ছে। ষোলো আনা যক্ষ্মা দূরীকরণের জন্য টানা তিনদিন ধরে চলা অভিযানের মূল লক্ষ্য শুধু দত্তক নেওয়াই নয়, স্কুল, কলেজে যক্ষ্মা নির্ণয় শিবির, ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হবে। এই কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি যক্ষ্মা রোগীর জন্য তিন কেজি চাল, দেড় কেজি ডাল, ২৫০ গ্রাম ভেষজ রান্নার তেল ও এক কেজি গুড়ো দুধ বা ৬ লিটার দুধ বা এক কেজি চিনাবাদাম- একটি মাসিক খাবারের লিস্ট সুপারিশ করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, একটি সরকারি সূত্র অনুসারে, ওই লিস্টে ৩০টি ডিমও যোগ করা হতে পারে। পরবর্তীক্ষেত্রে, এই পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি দাতা সংস্থা বা ব্যক্তি বৃত্তিমূলক সহায়তা, চিহ্নিতকরণে সহায়তা বা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি ও খনিজ সমৃদ্ধি পুষ্টিকর বিকল্পও প্রদান করতে পারবে বলে জানা গিয়েছে।
বর্তমানে দেশে যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশের বয়স হল ১৫ থেক ৪৫ বছর। বিশেষজ্ঞদের মতে, টিকা দেওয়া ও অপুষ্টি মোকাবিলায় সহায়তা করাই এখন যক্ষ্মা-র বিরুদ্ধে একটি প্রধান হাতিয়ার। গবেষকদের মতে, পোলিওর মত যক্ষ্মা রোগও ভারত থেকে বিদায় নিচ্ছিল। কিন্তু কোভিডের কারণে এই মারাত্মক রোগ ফের চাঙ্গা হতে শুরু করেছে তলে তলে। যার প্রভাবে যক্ষ্মা নির্মূলের তালিকায় ধীরে ধীরে পিছিয়ে যাচ্ছে ভারত। ২০২০ সালের মধ্যে ‘নীরব ঘাতক’ হিসেবে মানুষের মধ্যে আরও চেপে বসেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, কোভিডের সময় থেকে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের যক্ষ্মা উপসর্গের সঙ্গে যক্ষ্মার সাধারণ উপসর্গগুলিই সনাক্ত করা হয়নি ও চিকিত্সার সুযোগ পায়নি।