মশাবাহিত রোগ হল ডেঙ্গু। ফ্লাভিভিরিডে পরিবারের ভাইরাস ডেঙ্গু। স্ত্রী এডিস ইজিপ্টাই মশা কোনও ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ালে ওই মশার দেহে ডেঙ্গু ভাইরাস প্রবেশ করে। এরপর ওই মশা অন্য কোনও সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হয়। সাধারণত দিনের বেলা এই মশা কামড়ায়। এখানেই শেষ নয়। ডিম দেওয়ার জন্য মশার রক্তের দরকার হয় বলে একই মশা একাধিক ব্যক্তির দেহ থেকে রক্ত সংগ্রহ করতে পারে। এর ফলে একাদিক লোক ডেঙ্গু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন। এমনকী একজন সন্তানসম্ভবা মহিলারও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এখানেই শেষ নয়, সন্তানসম্ভবা মহিলা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে গর্ভস্থ ভ্রূণও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারে। ডেঙ্গু রোগে এমন কিছু জটিলতা তৈরি হয় যার কারণে গর্ভবতী মা ও গর্ভস্থ সন্তানের প্রাণ নিয়েও টানাটানি পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
লক্ষণ
ডেঙ্গুর লক্ষণ সব ক্ষেত্রেই এক—
• প্রচণ্ড জ্বর। জ্বর উঠতে পারে ১০২ থেকে ১০৪ অবধি। • এছাড়া গায়ে ব্যথা • গাঁটে গাঁটে ব্যথা • চোখে পিছনে ব্যথা • মাথায় তীব্র ব্যথা • মাথা ঘোরা • বমি • বমি বমি ভাব • গলা ব্যথা • ত্বকে র্যা শ ইত্যাদি।
সাধারণত বেশিরভাগ রোগীর সাধারণ চিকিৎসাতেই রোগ সেরে যায়। কোনও জটিলতা তৈরি হয় না। তবে অল্প কিছু লোকের দেহে জটিলতা দেখা যেতে পারে। এই ধরনের রোগীর দেহে হেমোরেজিক জ্বর ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। এর ফলে একাধিক অঙ্গ বিকল হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
এমতাবস্থায় রোগীর প্রাণ নিয়ে টানটানি পড়ে যেতে পারে। তাই ডেঙ্গুর আগাম লক্ষণগুলি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। রোগীর ব্লাড প্রেশার কমে যাওয়া, লিভারে গণ্ডগোল, একাধিক অঙ্গ থেকে রক্তপাতও হতে পারে।
এছাড়া কিছু কিছু রোগী ঠান্ডায় কাঁপতে তাকেন, কথাবার্তা অসংলগ্ন হয়ে যায়, শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে যায়। পেটে একটানা ব্যথা হতে থাকে।
ডেঙ্গু ভাইরাস ভ্রূণের দেহেও প্রবেশ করতে পারে এমনকী সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময়েও সদ্যোজাত ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। তবে সাধারণত ভ্রূণের বিরাট সমস্যা উপস্থিত হয় না। কিছু সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ডেঙ্গুর কারণে সদ্যোজাতর ওজন কম হওয়া বা সময়ের আগে বাচ্চার জন্ম হওয়ার মতো জটিলতা বিরল ক্ষেত্রেই হয়।
চিকিৎসকের শরণাপন্ন কখন হবেন?
ডেঙ্গু পজিটিভ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অনেক পরে রোগ নির্ণীত হলে বা অসুখ জটিল আকার ধারণ করলে তা প্রেগন্যান্সিতে প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকী ভ্রূণেরও সমস্যা হতে পারে। সঠিক সময়ে ভাইরাস চিহ্নিত করলে ও চিকিৎসা চালু করা গেলে যে কোনও খারাপ প্রভাব প্রতিরোধ করা যাবে। মা ও সন্তানের জীবনও বাঁচানো যাবে।
চিকিৎসা
প্রেগন্যান্সিতে ডেঙ্গু হলে তা অনেকসময় দেরিতে চিহ্নিত হয়। কারণ বমি, মাথাঘোরার মতো সমস্যা প্রেগন্যান্সিতেও কারও কারও হয়। ফলে ডেঙ্গু নাকি প্রেগন্যান্সি— ঠিক কোন কারণে শারীরিক নানা উপসর্গ দেখা দিচ্ছে তা বোঝা খুব জরুরি। তাই বিন্দুমাত্র সন্দেহ হলে আগে টেস্ট করান, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
তাছাড়া কথাতেই আছে, প্রতিকারই প্রতিরোধের উপায়। অতএব ডেঙ্গু মশার কামড় থেকে বাঁচতে এই সময় ফুলহাতা জামা পরুন। মশা তাড়ানোর উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন। মশা প্রতিরোধী ক্রিম মাখতে পারেন চিকিৎসকের পরামর্শ মতো। মশারি টাঙিয়ে শুয়ে থাকুন। বাড়ির আশপাশ ও এলকায় জল জমতে দেবেন না।
প্রেগন্যান্ট মহিলাদের অবশ্যই চিকিৎসকের নজরদারিতে রাখতে হবে। কারণ ডেঙ্গুতে প্লেটলেট কমে যায়। ফলে প্রসবকালীন সময়ে জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই দরকার পড়লে প্লেটলেট দিতে হবে। এছাড়া অন্যান্য থেরাপি প্রয়োজন বুঝে চিকিৎসক নিতে বলবেন রোগীকে। সেগুলি যথাযথ মেনে চলা প্রয়োজন।