ব্যস্ত জীবনযাপনের মাঝে নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই। কখনও অফিসে কাজের চাপ, কখনও সম্পর্ক নিয়ে দো-টানা, সাংসারিক অশান্তি চলেই যাচ্ছে জীবনে। এছাড়া অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন সবসময়। জানেন, এই মানসিক চাপগুলোই আপনার আয়ু কমিয়ে দিচ্ছে? ছোট ছোট মানসিক চাপের জেরেই তৈরি হয় মানসিক অস্থিরতা, অবসাদ, হতাশার মতো সমস্যা। তখনই শরীরকে জাপটে ধরে অনিদ্রা, ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের সমস্যা। আর বাড়ে হৃদরোগের ঝুঁকি।
মানসিক চাপ শরীরের উপর ব্যাপক ভাবে প্রভাব ফেলে। বিশেষত, হার্টের উপর। ২০২১ সালের ৯০০ জন মানুষের উপর একটি গবেষণা করা হয়। সেখানে দেখা হয়, মানসিক চাপ কীভাবে হৃদযন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলছে। এই একই গবেষণা আগেও ৫২টি দেশের প্রায় ২৪ হাজারেরও বেশি মানুষের উপর করা হয়েছিল। সেখানেও ধরা পড়েছিল একই চিত্র। গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপে ভোগার কারণে মানুষের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ বেশি বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মস্তিষ্কে ‘অ্যামিগ্ডালা’ নামের একটি অংশ রয়েছে, যা মানসিক চাপ বৃদ্ধির কারণে সক্রিয় হয়ে যায়। তখনই মস্তিষ্ক দেহকে সিগন্যাল দেয় ‘স্ট্রেস’ হরমোন উৎপাদনের কারণে। দেহে যখনই স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, তখনই নানা জটিলতা দেখা দেয়। স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে হার্টে রক্ত প্রবাহে বাধা তৈরি হয়। হৃদস্পন্দনের গতি অনিয়মিত হয়ে যায়। পাশাপাশি ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতায় বাধা দেয়। তখনই অনিদ্রা, রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সঙ্গে ওজনও বাড়তে থাকে। আর এগুলো চাপ সৃষ্টি করে হার্টের উপর। এখান থেকেই বাড়ে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি।
মানসিক চাপের সঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে গেলে লাইফস্টাইলের উপর নজর দিতে হবে। আপনি কোনও ভাবেই কাজের চাপ, সম্পর্কের জটিলতা, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তায় থাকা থেকে বেরোতে পারবেন না। এই ধরনের সমস্যা কমবেশি সকলের জীবনেই চলে। জীবনে সমস্যা থেকেও কীভাবে নিজেকে স্ট্রেস মুক্ত রাখবেন, এটাই হল চ্যালেঞ্জের। এক্ষেত্রে প্রতিদিন যোগব্যায়াম করুন। তার সঙ্গে সঠিক ডায়েট মেনে চলুন।
যোগব্যায়াম করলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয়। পাশাপাশি স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। আর বাড়িয়ে তোলে ‘হ্যাপি’ হরমোনের মাত্রা। এর সঙ্গে শাকসবজি, ফল, দানাশস্য, বাদাম ইত্যাদি বেশি করে খেতে হবে। এগুলো মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখার পাশাপাশি হৃদরোগের ঝুঁকিও কমায়। অস্বাস্থ্যকর খাবার যত বেশি খাবেন, হৃদরোগের মতো ক্রনিক অসুখের ঝুঁকি বাড়বে।