চিকিৎসা শাস্ত্রে দইকে (Curd) প্রোবায়োটিকপূর্ণ খাদ্য (Probiotic-rich Food) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমাদের পরিপাকতন্ত্র শক্তিশালী করতে কাজে আসে দই। প্রশ্ন হল প্রোবায়োটিক কী? আমাদের মনে রাখতে হবে মানবদেহের পরিপাকতন্ত্রে খারাপ ও ভালো উভয় ধরনের ব্যাকটেরিয়ায় থাকে। পরিপাকতন্ত্রে (Gut Health) খারাপ ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা বৃদ্ধি পেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ও হজমের বিবিধ সমস্যা দেখা যায়। স্বাস্থ্যও ভেঙে পড়তে থাকে। প্রোবায়োটিক হল এমন কিছু জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া যা পরিপাকতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। যে সমস্ত ব্যক্তি হজমের গণ্ডগোলে ভোগেন তাঁদের মাঝেমধ্যেই তাই দই খাওয়া উচিত। এর ফলে তাঁদের পরিপাকতন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়বে। খাদ্য হজম করতেও সুবিধা হবে।
আমাদের ধারণা সাধারণত গ্রীষ্মকালেই খাদ্য হজমে সমস্যা হয়। তাই গ্রীষ্মকালে দই খাওয়ার অভ্যেস রয়েছে অনেক গৃহকোণেই। গরমকালে দই খেলে পেট তো ঠান্ডা থাকেই তার সঙ্গে শরীরে ও মনে একটা শীতলভাবও আসে। অথচ শীতকাল এলেই আমরা দই খাওয়া বন্ধ করে দিই। কারণ, আমাদের ধারণা দই ঠান্ডা খাবার। তাই শীতকালে দই খেলে নির্ঘাৎ সর্দি ও কাশিতে ভুগতে হবে! সত্যিই কি তাই? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
শীতকালে এমনিতেই জ্বর, সর্দি, কাশির প্রকোপ বাড়ে। তাই নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা দরকার। শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে একাধিক খাদ্য। শীতকালে মরশুমি ফল ও খাদ্য খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে সবসময় উপকারী। তাই বলে গ্রীষ্মের প্রিয় দইকে একেবারে পত্রপাঠ খাদ্যতালিকা থেকে বিদায় করার কোনও অর্থ নেই। কারণ দইয়ে প্রোবায়োটিক ছাড়াও থাকে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। বিশেষ করে ক্যালশিয়ামের কথা উল্লেখ করতেই হবে। হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্যালশিয়াম সবচাইতে জরুরি উপাদান। এছাড়া অ্যাসিডিটি, পেট ফাঁপা, গ্যাসের সমস্যা থেকেও মুক্তি দিতে সক্ষম দই। এছাড়া দইয়ে রয়েছে ভিটামিন বি১২ এবং ফসফরাস। পুষ্টি উপাদানগুলি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
অবশ্য আয়ুর্বেদ মতে, শীতকালে দই খাওয়া এড়িয়ে চলাই উচিত। কারণ শীতকালে দই শ্লেষ্মাক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে কাশি, অ্যাজমা, সাইনাস ও ঠান্ডা লাগার ধাত আছে এমন ব্যক্তির জন্য শীতকালকে সমস্যাবহুল করে তুলতে পারে দইয়ের সেবন। অতএব কোনও ব্যক্তি আয়ুর্বেদ মতে জীবনযাপন করলে, তাঁর শীতকালে দই না খাওয়াই উচিত।
তবে কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন শীতকালেও মেপে দই খাওয়া যায়। খুব ভালো হয় বিকেল পাঁচটার আগে দই খেতে পারলে। রাতে দই খেলে তা শ্লেষ্মার মাত্রা বাড়াতে পারে। বিশেষ করে অ্যালার্জি এবং অ্যাজমার সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে দই স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। কারণ পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখতে দইয়ের ভূমিকা রয়েছে যা আবার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বৃদ্ধিতেও ইতিবাচক ভূমিকা নেয়।
তবে হ্যাঁ, শীতকালে ফ্রিজ থেকে দই বের করে সঙ্গে সঙ্গে খেলে কিন্তু সত্যিই ঠান্ডা-সর্দি লেগে যাওয়ার আশঙ্কা দূর করা যাবে না। তাই ফ্রিজ দই বের করে অন্তত ঘণ্টা দু’য়েক অপেক্ষা করুন। দইয়ের ঠান্ডাভাব কাটতে দিন। তারপর দই খান। এভাবে দই খেলে শীতকালেও নিশ্চিন্তে দই খাওয়া যায়।
কীভাবে শীতকালে ডায়েটে দই অন্তর্ভুক্ত করবেন—
• লাঞ্চের সময় একবাটি দই খান। চিনি বা নুন যোগ করবেন না।.
• লাঞ্চের এক ঘণ্টা বাদে দইয়ের সঙ্গে ফল যোগ করে স্মুদি বানিয়ে নিতে পারেন।
• ওটস-এর সঙ্গে দই যোগ করে খেতে পারেন ব্রেকফাস্টে।
• গোটা পাঁচেক বাদাম ও দই একসঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে ব্রেকফাস্টের ঘণ্টাখানেক পরে।
• শসা ও দই দিয়ে বানাতে পারেন রায়তা।
• ভেষজ ও মশলা দইয়ের সঙ্গে ফেটিয়ে নিয়ে খেতে পারেন লাঞ্চের পর।