শরীরের জন্য কোলেস্টেরল ( Cholesterol) জরুরি। এমনকী ৮০ শতাংশ কোলেস্টেরল আমাদের শরীর নিজের থেকেই তৈরি করে। শরীরের স্বাস্থ্যকর কোষ তৈরির জন্য কোলেস্টেরল জরুরি। তবে লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (LDL) বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়লে তা চিন্তার। এই ধরনের কোলেস্টেরল হার্ট ডিজিজের (Heart Disease) আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে। খুব নিম্নমানের জীবনযাত্রা যেমন ভাজাভুজি, জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অভ্যেস, শারীরিক শ্রমের অভাব এবং ধূমপানে আসক্তি রক্তে বাড়িয়ে দেয় খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়লে তা দেহের বিভিন্ন রক্তবাহী নালীর অন্দরের গাত্রে জমা হতে থাকে। এই ধরনের ডিপোজিটকে বলে প্লাক। ধীরে ধীরে এই ধরনের কোলেস্টেরল জমার মাত্রা বাড়তে থাকে। বিষয়টি অনেকা জলবাহী নালীতে ময়লা জমে যাওয়ার মতো। ফলে ময়লা জমলে নলে যেমন জলপ্রবাহ আটকে যায় তেমনই রক্তবাহী নালীতেও কোলেস্টেরল জমে যাওয়ার কারণে রক্তসঞ্চালন সীমিত বা ব্যাহত হয়।
এই ধরনের প্লাকের সঙ্গে রক্তের অণুচক্রিকার ধাক্কা লেগে তা ভেঙে যতে পারে ও ফলে সেখানে রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কা থাকে। এই ক্লট বা জমা রক্তের কণা কোনওভাবে হার্টের করোনারি আর্টারিতে আটকে গেলে সেখানে রক্তপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর ফলে হার্টের পেশিতে অক্সিজেন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান পৌঁছতে পারে না। হয় হার্ট অ্যাটকের মতো সমস্যা। দেখা দিতে পারে স্ট্রোকের মতো জটিলতাও। অতএব রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ছে কি না তা আগে থেকে বোঝা জরুরি। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা যাবে ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো সম্ভব হবে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ছে কি না তা কয়েকটি লক্ষণ দেখে বোঝা যেতে পারে। এই ধরনের বিপদ সঙ্কেতগুলিকে এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়।
ত্বকে র্যাশ
ত্বকে গোলাপি রঙের র্যাশ বা জমাট কোনও অংশ দেখলে সতর্ক হন। ব্রণের আকারের এই ধরনের র্যাশ রক্তে কোলেস্টেরল জমার সঙ্কেত হতে পারে। কারণ রক্তে মাত্রাতিরিক্ত চর্বি থেকেই এই ধরনের র্যাশ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব ডার্মাটোলজি অ্যাসোসিয়েশনের মতে পায়ের নীচের দিকে, হাতের তালুতে ও চোখের কোলে এমন গোলাপি, কমলা এবং হলদেটে স্কিন র্যাশ বা গ্রোথ রক্তে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরলের সঙ্কেত দেয়।
হাত এবং পায়ে ফোলাভাব ও অবশভাব
পেরিফেরিয়াল আর্টারি ডিজিজ-এর মতো জটিল স্বাস্থ্যের সমস্যা তৈরি করতে পারে রক্তে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল। এক্ষেত্রে শরীরের নীচের অংশে বিশেষ করে পা এবং পায়ের পাতায় রক্তপ্রবাহের পথে বাধা তৈরি করে কোলেস্টেরল। ফলে হাঁটার সময় পেরিফেরিয়াল আর্টারি ডিজিজ-এ আক্রান্ত ব্যক্তি অ্যাকিউট লেগ পেইন বা পায়ে ব্যথার সম্মুখীন হন। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান না করলে পায়ের রং ফ্যাকাসে বা নীল হয়ে যেতে পারে। একইসঙ্গে নিম্নাঙ্গে অবশভাব, পা ফোলা এবং দুর্বলভাব দেখা যায়।
নখের স্বাস্থ্য
হাতে এবং পায়ে রক্তবাহী নালিকাগুলিতে প্লাক জমে যাওয়ার কারণে রক্তনালীগুলি সরু হয়ে পড়ে। তাই নখে এবং শরীরের অন্যান্য অংশে রক্তপ্রবাহ সীমিত হয়ে যায়। নখে দেখা যায় কালো দাগ যা স্প্লিন্টার হেমোরেজ বলে পরিচিতি।
চোখের চারপাশে হলুদ দাগ
বিনাইন বা ক্যান্সার নয় এমন হরিদ্রাভ বৃদ্ধি দেখা যেতে পারে চোখের চারপাশে। এই ধরনের গ্রোথকে বলে জ্যান্থেলাজমা বা জ্যান্থেলাজমা পালপিব্রেরাম। এই ধরনের হরিদ্রাভ বৃদ্ধি হয় ত্বকের উপরে কোলেস্টেরল জমার কারণে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের গ্রোথ যে শুধু রক্তে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল জমার দিকে ইঙ্গিত করে তাই নয়, একইসঙ্গে ডায়াবেটিস এবং থাইরয়েডের সমস্যার দিকেও নির্দেশ করে।
(Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।)