করোনার দাপটে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে। আর এই সবকিছুর সঙ্গে নিউনরম্যাল পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়াতে গিয়ে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সদ্যোজাতরা। মা এবং নবজাতকের ‘স্কিন টু স্কিন’ টাচ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এর প্রভাবে সদ্যোজাতদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি রোগের পাশাপাশি মৃত্যুর সম্ভাবনাও দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্বের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বা ‘হু’- এর দু’টি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অসংখ্য হেলথকেয়ার ইউনিটে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাচ্চাদের মায়ের থেকে আলাদা করে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে হয় ওই সবে মা হওয়া মহিলাদের করোনা হয়েছে বা কোভিডের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। তাই সুরক্ষার খাতিরেই মায়ের সঙ্গে সন্তানের ‘স্কিন টু স্কিন’ টাচ বন্ধ রাখা হয়েছে। অনেকক্ষেত্রে আবার নবজাতককে স্তন্যপান করানোতেও বাধা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন- সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে হাজার গুণ, নিয়ন্ত্রণে রাখে ডায়াবেটিস, কমায় হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা
কিন্তু এই পরিস্থিতিতেই দেখা গিয়েছে যাঁরা ‘ক্যাঙারু মাদার কেয়ার’ পদ্ধতিতে নবজাতকদের দেখভাল করেছেন, তাঁরা অসংখ্য শিশুর প্রাণ বাঁচিয়েছেন।
এই ক্যাঙারু মাদার কেয়ার আসলে কী?
এই পদ্ধতিতে মা নবজাতকের সঙ্গে স্কিন টু স্কিন টাচে থাকেন। মা তাঁর সদ্যোজাত সন্তানের দেখভাল করেন ভীষণরকম শারীরিক (মায়ের বুকের সঙ্গে সন্তানকে জড়িয়ে রাখা) যোগাযোগ রেখে। একেই বলে ক্যাঙারু মাদার কেয়ার। Lancet Eclinical Medicine জার্নালের রিপোর্ট অনুসারে এই পদ্ধতিতে দেখভাল, যত্নআত্তির ফলে প্রাণে বেঁচে গিয়েছে ১ লক্ষ ২৫ হাজারেরও বেশি শিশু।
হু- এর গবেষক (মাতৃত্ব এবং নবজাতকের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়) অংশু ব্যানার্জি জানিয়েছেন, সারা বিশ্বে নবজাতকদের এই অধিকার রয়েছে যে, বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় শারীরিক যোগাযোগ (এক্ষেত্রে স্কিন টু স্কিন টাচ) মায়ের সঙ্গে তারা রাখতে পারে। আর করোনার মতো প্যান্ডেমিক বা মহামারি পরিস্থিতিতেও এটা এড়িয়ে চলা বা অস্বীকার করার কোনও জায়গাই নেই। অংশুর কথায়, “আমরা যদি এখনই কাজ করা শুরু না করি, তাহলে কয়েক দশক ধরে শিশুমৃত্যুর হার কমানোর যে উন্নত ছবি আমাদের সামনে এসেছে তা ঝুঁকির মুখে পড়বে।”
হু- এর তরফেও জানানো হয়েছে যে, সবে মা হওয়া মহিলার করোনা হলে কিংবা উপসর্গ দেখা দিলে বা কোভিড হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে একটা আলাদা ঘরে থাকতে পারবেন তিনি। শুধু তাই নয় স্কিন টু স্কিন কনট্যাক্ট রাখার পাশাপাশি স্তন্যপানও করাতে পারবেন নবজাতককে।