লিভার শরীরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। শরীরের একাধিক ক্রিয়া সম্পাদনে লিভার বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি রক্ত প্রবাহ থেকে ক্ষতিকারক পদার্থগুলি অপসারণ করে, অন্যান্য রাসায়নিককে বিপাক করে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে গ্লুকোজ উৎপাদনে সাহায্য করে, পিত্ত উৎপাদন করে যা চর্বি হজম করতে এবং ভিটামিন শোষণ করতে সহায়তা করে এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং, লিভারে কোনও সমস্যা দেখা দিলে তার প্রভাব শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লক্ষ্য করা যায়।
লিভারে কোনও জটিলতা দেখা দিলে তার উপসর্গ সবসময় যে শরীরে প্রকাশ পাবে, তা হয় না। যেমন ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। অবস্থার অবনতি হলে লক্ষণগুলো স্পষ্ট হতে থাকে। সাধারণত লিভারে কোনও সমস্যা দেখা দিলে পেটে ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া, রং গাঢ়ের প্রস্রাব, বমি বমি ভাব, বমি, ত্বক ও চোখে হলদেটে ভাব ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। এছাড়াও লিভারের সমস্যার বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় পায়ের পাতায়।
পায়ে ব্যথা লিভারের রোগের একটি সাধারণ লক্ষণ। যখন লিভার সঠিকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তখন শরীরের নীচের অংশে অতিরিক্ত তরল ও দূষিত পদার্থ জমা হতে থাকে। এর জেরে পেরিফেরাল এডিমার সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া লিভার সিরোসিসের মতো যকৃতের সমস্যা পোর্টাল হাইপারটেনশনের কারণ হতে পারে। এই অবস্থায় পায়ে ভেরিকোজ শিরা গঠন হয়, যার কারণে পায়ে ব্যথা হয়।
পায়ে চুলকানির সমস্যা কিন্তু লিভারের রোগের লক্ষণ হতে পারে। লিভারের পিত্ত নালীগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হলে শরীরে পিত্ত জমতে থাকে। এর জেরে পায়ে চুলকানির সমস্যা দেখা দেয়। অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে হেপাটাইটিস সি সংক্রমণ দেখা দেয়। এই রোগের ক্ষেত্রে পায়ে অসাড়তা দেখা দেয়। অনেক সময় পা ঝিনঝিন করে। চিকিৎসা ভাষায় একে প্যারেস্থেসিয়া বলা হয়। বেশ কিছু ক্ষেত্রে লিভারের রোগ পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথির কারণ হতে পারে। এই অবস্থায় পায়ের স্নায়ু প্রভাবিত হয়। সুতরাং, এই লক্ষণগুলো এড়িয়ে গেলে ভবিষ্যতে সমস্যা বাড়তে পারে।
আর যদি লিভারের রোগ থেকে দূরে থাকতে চান, তাহলে খাওয়া-দাওয়ায় রাশ টানুন। স্বাস্থ্যকর খাবার খান। অ্যালকোহন সেবনের মাত্রা কমিয়ে ফেলুন। ধূমপান ত্যাগ করুন। ওজনের দিকে খেয়াল রাখুন। নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। অন্যথায়, লিভারের সমস্যা বাড়বে এবং পায়ের এই লক্ষণগুলো জড়াল হবে।