যখন করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছিল, দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। আর যখন ধীরে ধীরে ‘আনলক’ প্রক্রিয়া শুরু হয় তখনও কিছু নিষেধাজ্ঞা ছিল। যার মধ্যে অন্যতম ছিল জিম নিয়ে। জিম খোলার অনুমতি মিললেও ৫০ শতাংশের বেশি লোক উপস্থিত থাকা যাবে না। তার কারণ সংক্রমণ। কিন্তু এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। মানুষের জীবন ফিরেছে স্বাভাবিক ছন্দে। তবু জিম থেকে যদি সংক্রমণের প্রসঙ্গকে টানা হয়, তাহলে আপনার বাড়ির টয়লেট সিটের চেয়ে ৭,৭৫২ গুণ বেশি ব্যাকটেরিয়া জিমের ট্রেডমিল ও স্টেশনারি বাইকে রয়েছে। শুনতে অবাক লাগছে? কিন্তু এই তথ্য একদম সঠিক বলে দাবি জানাচ্ছে FitRated.com।
করোনা ভাইরাস আমাদের জীবনকে দু’বছরে পাল্টে দিয়েছে। কিন্তু FitRated.com-এর এই তথ্যের সঙ্গে করোনা ভাইরাসের কোনও যোগসূত্র নেই। কারণ এই পরীক্ষাটি করা হয় ২০১৭ সালে। ফিটনেস ইকুইপমেন্ট রিভিউ সাইট হল FitRated.com। FitRated.com তিনটি বড় জিম চেইনের ২৭টি ফিটনেস ইকুইপমেন্ট থেকে ব্যাকটেরিয়ার নমুনা সংগ্রহ করে। সেই নুমনা থেকে যে তথ্য উঠে আসে তা দেখে চমকে উঠবেন আপনিও। বাড়ির টয়লেট সিটে যে পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া উপস্থিত থাকে, তার চেয়ে ৭,৭৫২ গুণ বেশি ব্যাকটেরিয়া রয়েছে জিমে থাকা ফিটনেস ইকুইপমেন্টে।
FitRated.com-এর মতে, জিমের ফিটনেস ইকুইপমেন্টের প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে গড়ে ১.১ মিলিয়নেরও বেশি জীবাণু রয়েছে। তুলনামূলকভাবে, ন্যাশনাল স্যানিটেশন ফাউন্ডেশনের মতে, একটি বাড়ির টয়লেট সিটে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ১৭২ CFU ব্যাকটেরিয়ার গঠন পাওয়া যায়। তবে FitRated.com-এর করা এই সমীক্ষায় তারা বাড়ির নয়, বরং পাবলিক টয়লেট সিট থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই, পাবলিক টয়লেট সিট যে কোনও বাড়ির শৌচালয় থেকেও অপরিষ্কার হয়। এবং পাবলিক টয়লেট সিটেও সেই পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়নি যা একটি ফিটনেস ইকুইপমেন্টে পাওয়া গিয়েছে। আর সেই সংখ্যাটাই প্রায় ৭.৭৫২ গুণ বেশি।
ভাবতে সত্যি অবাক লাগছে বলুন! আসলে টয়লেট সিট নিয়মিত পরিষ্কার করা হলেও জিম এবং ফিটনেস ইকুইপমেন্ট রোজ পরিষ্কার করা হয় না। তবে, FitRated.com দাবি জানায়, যে সব ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান ফিটনেস ইকুইপমেন্টে পাওয়া গিয়েছে তা সবগুলো ক্ষতিকারক নয়। কিন্তু তার মধ্যে ৭০ শতাংশ জীবাণু-ই ক্ষতিকারক।
কিন্তু এই কারণে তো আপনি জিমে বন্ধ করতে পারবেন না। কারণ সুস্থ থাকতে গেলে শরীরচর্চা জরুরি। তাহলে উপায় কী? অ্যারিজোনার জুকারম্যান কলেজ অফ পাবলিক হেলথের অণুজীববিজ্ঞানী এবং সহযোগী অধ্যাপক কেলি রেনল্ডস সংবাদমাধ্যমকে জানায় যে, এই ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা হল হাত ধুয়ে নেওয়া। ওয়ার্কআউটের পর এবং খাবার খাওয়ার আগে সবসময় হাত ধুয়ে নিন। হাত না ধোওয়া অবস্থায় মুখে হাত একদম দেবেন না। তবে জিমের কর্তৃপক্ষদেরও কিছু সচেতনতা মেনে চলতে হবে। নিয়মিত ফিটনেস ইকুইপমেন্টগুলো পরিষ্কার করতে হবে। ৩০ সেকেন্ড করে সময় নিয়ে প্রতিটার সরঞ্জাম স্যানিটাইজ করতে হবে। এতে একটু হলেও সংক্রমণের ঝুঁকি এড়ানো যাবে।