‘একবার করোনা হলে আর হবে না সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা’, বলছেন করোনা চিকিৎসক

Apr 17, 2021 | 8:31 PM

 কারও যদি ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। অন্য দিকে, দোকানে অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাব দেখা দিতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। 

একবার করোনা হলে আর হবে না সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা, বলছেন করোনা চিকিৎসক
গ্রাফিক্স- অভিজিৎ বিশ্বাস।

Follow Us

এক বছরেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। আমাদের রোজনামচার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে বেশ কয়েকটি শব্দ: করোনা, কোভিড-১৯, লকডাউন, কোয়ারেন্টিন, মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং, আইসোলেশন, করোনা ভ্যাকসিন, ওয়ার্ক ফ্রম হোম। তবে মুখে মাস্ক-ফেসশিল্ড থাকুক না থাকুক, স্যানিটাইজ়ারের ব্যবহার বাড়ুক না বাড়ুক, সত্যিই কি সচেতনতা বেড়েছে আমাদের মধ্যে? একবার করোনা সংক্রমণ হয়েছে, এমন কিছু মানুষের মনে ভ্রান্ত ধারণা বদ্ধমূল বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে-‘একবার হয়েছে, আর হবে না।’ তাই মাস্ক পরছেন না, সতর্কতাতেও ঢিলেঢালা ভাব। এই বিশ্বাসেই জল ঢেলে দিয়েছেন প্রফেসর-চিকিৎসক ডাঃ সুমন পোদ্দার । তাঁর সাফ বক্তব্য, এমন কোনও কথাই নেই, যে একবার করোনা হলে আর হবে না। TV9 বাংলাকে তেমন কথাই বলেছেন তিনি। তাই যাঁরা মনে করছেন, একবার আক্রান্ত হয়েছে বলে বেঁচে গিয়েছেন, আপনি প্রোটেক্টেড, সাবধান হয়ে যান। লড়াই এখনও বাকি।

প্রশ্ন: অনেকের ধারণা, একবার করোনা হয়েছে, শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে – তাই আগামী কয়েক মাসে আর করোনা হবে না। তাঁদের অনেকে মাস্ক ছাড়াই বেরিয়ে পড়ছেন, সুরক্ষাবিধিও মানছেন না অনেকক্ষেত্রে। তাঁদের উদ্দেশে আপনি কী বলবেন?

চিকিৎসক: এই ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। এখন করোনার স্ট্রেইন বদলাচ্ছে। সেই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, একবার করোনা সংক্রমণ হলেও আরেকবার হচ্ছে। এটা পুরনো স্ট্রেইনের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে। সেখানে বরং দেখা গিয়েছে, একবার করোনা হওয়ার পর তাঁর শরীরে বড় জোর তিনমাস অ্যান্টিবডি থাকছে। এরচেয়ে বেশি নয়। কারও শরীরে ছ’মাসও থাকছে। কিন্তু আমরা এটা জানি না, যে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে, সেটা কতখানি নিউট্রালাইজ়িং অ্যান্টিবডি।

আরও পড়ুন- কুষ্ঠি-ঠিকুজি নয়, বিয়ের আগে প্রয়োজন ডাক্তারি পরীক্ষা, মত চিকিত্‍সকের

 

প্রশ্ন: আরও একটু বিশদে যদি বলেন…

চিকিৎসক: এর অর্থ, আমাদের কাছে অনেক সৈন্য আছে। কিন্তু সেই সৈন্যর কাছে যদি অস্ত্র না থাকে, সে কি দেশ রক্ষা করতে পারবে? এই বিষয়টাও ঠিক তাই। ফলে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হলেই যে সে রক্ষা করতে পারবে, সেটা কিন্তু না-ও হতে পারে। করোনা যেহেতু নতুন রোগ, সেটির বিষয়ে আমরা চিকিৎসকরাও ধাপে-ধাপে নতুন-নতুন তথ্য জানতে পারছি। তাই এই তিনমাসের মধ্যে করোনার অন্য কোনও স্ট্রেইন আক্রমণ করলে শরীরে উপস্থিত অ্যান্টিবডিগুলি সুরক্ষাকবচের কাজ না-ও করতে পারে।

প্রশ্ন: একবার করোনা হওয়ার পর দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে কি অসুস্থতার মাত্রা বেশি?

চিকিৎসক: সেটা এখনও প্রমাণিত হয়নি। আপাতত গবেষণা স্তরেই রয়েছে। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে যেমন, দ্বিতীয়বারে বেশি সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা। এক্ষেত্রে কী হবে, এখনও জানা যায়নি। কোভিড মূলত ইমিউনোলজিক্যাল ডিজ়িজ়। কেবল বুকে সংক্রমণ মানেই করোনা নয়। শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গও জড়িয়ে রয়েছে। রক্তের শিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই মানুষের রোগ প্রতিরোধ-ক্ষমতার উপর অনেককিছু নির্ভর করছে। একেকজন মানুষের শরীরকে এক-একভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

প্রশ্ন: আপনার কথার রেশ ধরেই পরের প্রশ্ন, প্রথমবার আক্রান্ত হওয়ার পর দেখা গিয়েছে কিছু মানুষের শরীরে কোনও না কোনও গভীরতর ক্ষতিসৃষ্টি করেছে করোনা। পরের বার কী আরও বেশি ক্ষতি?

চিকিৎসক: হতে পারে। হবেই, সেটা বলা যায় না। অনেক সময় দেখা যায়, তিনমাস আগে করোনা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মাঝেমধ্যেই জ্বর আসে, হাতে-পায়ে ফুসকুড়ি কিংবা পেট খারাপ হয়। অনেকের হয়তো এগুলোর কিছুই হয় না। হার্টেও প্রভাব পড়ে। হার্টের শিরা খুলে যায়। এটা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

প্রশ্ন: করোনা হওয়ার সময় এবং পর থেকে কিছু ওষুধ – যেমন মাল্টিভিটামিন, ভিটামিন সি ট্যাবলেট খেয়ে চলেছেন অনেকে। মনে করছেন এই ওষুধগুলিই সুরক্ষাকবচ। এটা কতখানি সত্যি?

চিকিৎসক: যাঁদের শরীরে এই উপাদানগুলির খামতি আছে, খেলে ক্ষতি নেই। বরং খামতিগুলো ঢেকে দেবে। কিন্তু এটাই সুরক্ষা কবচ নয়। তাই-ই যদি হত, গোটা বিশ্বকে এই ওষুধগুলো খাওয়ারই পরামর্শ দিতাম আমরা। আমি সকলকে এটা কথাই বলব, প্রতিদিন করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। হাসপাতালে বেড নেই। কারও যদি ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। অন্য দিকে, দোকানে অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাব দেখা দিতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। যে রোগীর চিকিৎসা অক্সিজেন দিলেই হয়ে যাবে, তাঁকেও আমরা অক্সিজেন দিতে পারব না এরকমভাবে যদি চলতে থাকে। তাই সবার শেষ একটা কথাই বলব – দয়া করে নিজেরা একটু সচেতন হোন। মাস্ক পরা থেকে শুরু করে স্যানিটাইজ়েশন – করোনা বিধি মানুন অক্ষরে-অক্ষরে। নিজে সুরক্ষিত থাকুন, অপরকেও সুরক্ষিত রাখুন।

অলঙ্করণ- অভিজিৎ বিশ্বাস

Next Article