কোভিডে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁদের জ্বর, সর্দি-কাশির পাশাপাশি আরও একটি সাধারণ উপসর্গ ছিল। তা হল স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি হারিয়ে যাওয়া। কোভিড থেকে সেরে উঠলেও সেই স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি ফিরতে সময় লাগছিল বেশ কিছুদিন পর্যন্ত। তিন বছর পর কোভিডের প্রকোপ একটু কমেছে। যদিও জ্বর, সর্দি, ঠান্ডা লাগার সমস্যা এসব এখন ঘরে ঘরে। তবে এখন মানুষ নতুন একটি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই রোগে থাকছে না ঘ্রাণের অনুভূতি। ঠান্ডা লেগে নাক বন্ধ, শ্বাস নিতে না পারা এমন সমস্যা অনেকের হচ্ছে। সেখান থেকেও কেউ কোনও গন্ধ পাচ্ছেন না। আবার অনেকেই এই অদ্ভুত রোগের কারণে ঘ্রাণ হারাচ্ছেন। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলা হয় অ্যানোসমিয়া। এই রোগে থাকে না ঘ্রাণের অনুভূতি। অনেক সময় নাকে পলিপ বা অন্য কোনও বাধার কারণেও ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে যেতে পারে। এছাড়াও এই রোগ হলে গন্ধ শনাক্তকরণের প্রবণতাও কমে যায়।
অ্যানোসমিয়ার কারণে অনেক সময় স্বাদ, গন্ধ এই দুয়েরই অনুভূতি চলে যেতে পারে। কারণ স্বাদ আর গন্ধ এই দুইয়ের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। অ্যানোসমিয়া বলতে সম্পূর্ণ গন্ধের অনুভূতি চলে যায়,এজিয়াসিয়া সম্পূর্ণ স্বাদের অনুভূতি চলে যায়। অ্যানোসমিয়া ছাড়াও ফ্যান্টোসমিয়া, প্যারোসমিয়া, হাইপোসমিয়া-সহ একাধিক সমস্যা আসতে পারে।
অস্থায়ী অ্যানোসমিয়া সব বয়সের মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে। ৫০ বছরের বেশি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। অনেকের ক্ষেত্রে জন্মগত অ্যানোসমিয়া থাকে। কিন্তু সেই সংখ্যাটা নেহাতই অল্প। সর্দি, সাইনাস, অ্যালার্জি এবং ঠান্ডা লাগার ধাত থাকলে অ্যানোসমিয়া হতে পারে। বলা যায় সর্দি-কাশির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই উপসর্গগুলির স্থায়িত্ব বেশিক্ষণ হয় না। নিজে থেকেই তা সেরে যায়।
অ্যানোসমিয়া বিপজ্জনক না হলেও এখান থেকে অনেক রকম স্বাস্থ্য সমস্যা আসতে পারে। ধোঁয়া, গ্যাস লিক হলে বা খাবার নষ্টের যে গন্ধ তা অ্যানোসমিয়ার সমস্যা থাকলে বোঝা যায় না। এই সমস্যা এড়াতে স্মোক ডিটেক্টরের ব্যবহার কমাতে হবে। সেই সঙ্গে মেয়াদ উত্তীর্ণ কোনও খাবার খাওয়া চলবে না।
সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নাক বন্ধ এসব একটানা থাকলে এই অ্যানোসমিয়ার সংক্রমণ বেশি হচ্ছে। যদি দেখেন যে ঘ্রাণের কোনও অনুভূতি নেই তাহলে ইএনটি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে অবশ্যই পরামর্শ করে নেবেন। প্রয়োজনে সিটি স্ক্যান করাতে পারেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকেই সমস্যা সেরে যায়। তবে নাকে পলিপ থাকলে অপারেশনেই কাজ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে চিকিৎসক যা বলবেন তাই-ই মেনে চলুন।