অ্যাফাসিয়া (Aphasia) রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ায় অভিনয় ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন হলিউড অভিনেতা ব্রুস উইলিস (Bruce Willis)। ৬৭ বছর বয়সি এই দাপুটে অভিনেতা অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অভিনয় জগত থেকে সরে দাঁড়াতে হল। তার কারণ, পেশাগত জীবনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর শরীর।
বুধবার পরিবারের তরফ থেকে এই সংসাবদ সামনে আনতেই তা রাতারাতি ছড়িয়ে পড়ে নেটদুনিয়ায়। বিবৃতি অনুসারে, অভিনেতা অ্যাফাসিয়া রোগে আক্রান্ত। শরীরের নানা জটিলতা সমস্যা দেখা দিচ্ছে, যার ফলে তিনি অভিনয় ছাড়তে বাধ্য হলেন। কিন্তু কী এই রোগ? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কথা বলতে সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে আরও নানা জটিলকা থাকে, পাশাপাশি শব্দ উচ্চারণ, স্পষ্ট করে সংলাপ বলা কোনওটি তিনি বর্তমানে করতে পারবেন না।
১৯৮০ সালে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন উইলিস। ১৯৮৮ সালের অ্যাকশন মুভি ডাই হার্ডে একজন পুলিশ অফিসার জন ম্যাকক্লেন চরিত্রে অভিনয় করার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। হলিউডের অন্যতম সফল তারকা অভিনেত্রী হিসেবে বিরাজ করে গিয়েছেন।
অ্যাফাসিয়া রোগ কী?
মার্কিন সরকারের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (এনআইএইচ) এর মতে, অ্যাফেসিয়া হল একটি ব্যাধি যা মস্তিষ্কের যে অংশের মাধ্যমে কথা বলার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত হয় সেই অংশের ক্ষতির ফলে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। স্ট্রোক, টিউমার বা মাথায় আঘাতের কারণে ক্ষতি হতে পারে। যার ফলে কথা বলা, বোধগম্যতা এবং পড়ার বা লেখার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। এনআইএইচ ওয়েবসাইট অনুসারে এটি মস্তিষ্কের টিউমার বা একটি প্রগতিশীল স্নায়বিক রোগের ফলে ধীরে ধীরে বিকাশ করতে পারে। এ ছাড়াও মস্তিষ্কের টিউমার, ডিসারথ্রিয়া, স্নায়ুঘটিত রোগ ও মস্তিষ্কের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের ফলে ধীরে ধীরে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। আমেরিকায়, ন্যাশনাল অ্যাফেসিয়া অ্যাসোসিয়েশন (এনএএ) মতে, এই রোগে প্রায় দুই মিলিয়ন লোক আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ১৮০,০০০ জন প্রতি বছর এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়।
কারা অ্যাফেসিয়া দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়?
সাধারণত মধ্যবয়সী বা বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়, তবে NIH অনুসারে, যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। অ্যাফেসিয়ার প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি হল স্ট্রোক। একটি রক্ত জমাট বাঁধা বা একটি ফুটো বা ফেটে গেলে, মস্তিষ্কের অংশে রক্ত প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। মস্তিষ্কের কোষগুলি ধীরে ধীরে মারা যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে রক্তের সরবরাহ পায় না, যা অক্সিজেন এবং গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি বহন করে।
অ্যাফেসিয়ার প্রকারভেদ
এনএএ-এর মতে, অ্যাফেসিয়া গুরুতর আকার ধারণ করলে রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। তাই সচেতন থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। অ্যাফেসিয়ার দুটি বিস্তৃত বিভাগ রয়েছে – সাবলীল এবং অ-সাবলীল। এগুলিকে আরও বিভিন্ন প্রকারে উপ-বিভক্ত করা যেতে পারে – গ্লোবাল, ব্রোকা’স, ওয়ার্নিক’স, প্রাইমারি প্রোগ্রেসিভ, অ্যানোমিক এবং মিক্সড নন-ফ্লুয়েন্ট অ্যাফেসিয়া।
অ্যাফেসিয়া কি নিরাময় করা যায়?
এনআইএইচ জানিয়েছে, মস্তিষ্কের আঘাতের পরে, মস্তিষ্কে অসাধারণ পরিবর্তন ঘটে। অনেক সময় ভিটামিন বি১২-এর অভাব ও থাইরয়েডের সমস্যা থেকেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফলস্বরূপ, অ্যাফেসিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রথম কয়েক মাসে তাদের ভাষা এবং যোগাযোগের ক্ষমতার নাটকীয়ভাবে উন্নতি দেখতে পান, এমনকি চিকিত্সা ছাড়াই। দ্রুত চিহ্নিত করা গেলে ও বিশেষ কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব হতে পারে।
যাইহোক, অনেক ক্ষেত্রে, কিছু অ্যাফেসিয়া এই প্রাথমিক পুনরুদ্ধারের সময়কাল অনুসরণ করে থাকে। এই ক্ষেত্রে, রোগীদের যোগাযোগ করার ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে চিকিৎসকরা ওষুধ ও স্পিচ থেরাপির মতো চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্য নেন।
আরও পড়ুন: Obesity: ওবেসিটি থেকে মুক্তির উপায় কী? দ্রুত ওজন কমাতে বাড়িতেই মেনে চলুন এই ৫ সহজ ও জরুরি টিপস
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।