Polygraph Test: পলিগ্রাফ টেস্ট কী? কেমন করে গোয়েন্দারা এর মাধ্যমে ধরে ফেলেন অপরাধীকে?

Aug 23, 2024 | 8:11 PM

Polygraph Test: পলিগ্রাফ টেস্ট ঠিক কী? এই বিষয়ে সিনেমা বা সিরিজ দেখে আমাদের অনেকের কম-বেশি খানিকটা ধারণা থাকলেও বাস্তবটা কিন্তু অনেকটাই আলাদা। কী ভাবে সংগঠিত হয় সেই পদ্ধতি? কোন উপায়ে চিহ্নিত করা হয় অপরাধীকে?

Polygraph Test: পলিগ্রাফ টেস্ট কী? কেমন করে গোয়েন্দারা এর মাধ্যমে ধরে ফেলেন অপরাধীকে?
কী ভাবে ধরা পড়ে অপরাধীরা?

Follow Us

পলিগ্রাফ টেস্ট ঠিক কী? এই বিষয়ে সিনেমা বা সিরিজ দেখে আমাদের অনেকের কম-বেশি খানিকটা ধারণা থাকলেও বাস্তবটা কিন্তু অনেকটাই আলাদা। কী ভাবে সংগঠিত হয় সেই পদ্ধতি? কোন উপায়ে চিহ্নিত করা হয় অপরাধীকে? জানালেন দুই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অজয় গুপ্ত এবং চিকিৎসক শোভন দাস।

কী এই পলিগ্রাফ টেস্ট?

কোনও ব্যক্তি কোনও নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে সত্যি কথা বলছে না, মিথ্যে কথা বলছে নাকি কোনও সত্যি গোপন করার চেষ্টা করছে তা জানতেই এই বিশেষ পরীক্ষা করা হয়। সাধারণত কোনও অপরাধ সংগঠিত হলে, অপরাধীকে ধরার জন্য, বা দোষীকে চিহ্নিত করার জন্য এই বিশেষ পরীক্ষার সাহায্য নেয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি বা পুলিশ।

এই পরীক্ষা করার সময়, যার পরীক্ষা করা হচ্ছে তাঁকে সেই অপরাধ বা সেই ঘটনা সম্পর্কিত এবং অনান্য বিষয়েও নানা প্রশ্ন করা হয়। সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় তাঁর হার্টবিট, পালস রেট, স্নায়ুর চাপ কতটা এগুলির রিপোর্ট গ্রাফিক্যাল ফরম্যাটে নিয়ে এসে তারপর তা বিশ্লেষণ করা হয়। অনেকগুলি গ্রাফিক্যাল রেকর্ড তৈরি করে তা বিশেষজ্ঞরা বিশ্লেষণ করে দেখেন, সেই ব্যক্তি সত্যি কথা বলছেন না মিথ্যা কথা বলছেন।

কী করে বুঝবেন কেউ সত্যি কথা বলছেন নাকি মিথ্যে বলছেন?

এই বিষয়ে চিকিৎসক অজয় গুপ্ত বলেন, “এই পরীক্ষা করা হলে যে গ্রাফিক্যাল রিপোর্ট পাওয়া যায় তা দেখেই বোঝা যায়, যে যার পরীক্ষা করা হচ্ছে সে সাধারণ মানুষের মতোই কথা বলছে নাকি কোনও রকম মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে। এমনকি এক একটি বিশেষ প্রশ্ন শুনে তাঁর কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে তাও লক্ষ্য করা হয়। অনেক সময় এই পরীক্ষা করার আগে, যাঁর পরীক্ষা করা হচ্ছে তাঁকে ২৪ ঘণ্টা বা ৪৮ ঘণ্টা কেবল স্যালাইন দিয়ে বা গ্লুকোজ খাইয়েও রেখে দেওয়া হয়। এছাড়া কোনও খাবার দেওয়া হয় না। এই অবস্থায় পরীক্ষা করেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভাল ফল মিলেছে।”

ডাঃ শোভন দাসের কথায়, “এই ক্ষেত্রে ফিজিওলজিক্যাল পরিবর্তনকে লক্ষ করা হয়। কোনও কিছু লুকনোর চেষ্টা করলে বা অস্বীকার করার চেষ্টা করলে তাতে শরীরে কিছু পরিবর্তন ধরা পরে। হার্টবিট এবং পালসের তারতম্য দেখা যায়।”

কখন করা হয় পলিগ্রাফ টেস্ট?

ডাঃ অজয় গুপ্ত বলেন, “যদি কোনও অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পরে অভিযুক্তের সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ (ফিজিক্যাল এভিডেন্স) না থাকলে তখন সত্যি খুঁজে বার করতে বা দোষীকে শনাক্ত করতে এই বিশেষ পরীক্ষার সাহায্য নেন গোয়েন্দারা।”

দোষীকে চিহ্নিত করতে কতটা ভরসাযোগ্য এই পরীক্ষার ফলাফল?

ডাঃ অজয় গুপ্ত বলেন, “ধরুন কোনও ব্যক্তিকে ১০০টি প্রশ্ন করা হল। এবার সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় তাঁর শারীরিক মানসিক অবস্থা ঠিক কি ছিল তার যে গ্রাফিক্যাল রিপোর্ট পাওয়া যায় সেটিকে বিশ্লেষণ করে বার করা হয়, কেউ কতটা সত্যি কথা বলছে বা মিথ্যে কথা বলছে। সেখানে যদি দেখা যায় কারও সত্যি কথা বলার শতাংশ বেশি তাহলে ধরা হয় সে সত্যি বলছেন। আবার উলটো দিকে কারও যদি মিথ্যে বলার ভাগ বেশি হয় তাহলে ধরা হয় সে মিথ্যে কথা বলছেন। তবে এই ক্ষেত্রে যেই রিপোর্টই পাওয়া যাক না কেন তাতে কেবল সত্যি সম্পর্কে একটা আভাস মেলে মাত্র। কখনই এই রিপোর্টকে ধ্রুব সত্য হিসাবে মেনে নেওয়া যায় না। তদন্তের ক্ষেত্রে এই রিপোর্ট সহকারী তথ্য প্রমাণ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।”

ডাঃ শোভন দাস বলেন, “এই টেস্টের ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করে কে প্রশ্ন করছেন, তাঁর দক্ষতার উপরে। এই পরীক্ষায় খুব সহজেই তদন্তকে অপরাধী ভুল দিকে পরিচালিত করতে পারে। এই পরীক্ষার ‘প্রামাণ্য গুরুত্ব'(এভিডেন্সইয়াল ভ্যালু) খুবই কম।”

এই পরীক্ষার ফলাফলের গুরুত্ব কতটা?

অজয়বাবু বলেন, “বর্তমানে ভারতীয় বা বেশিরভাগ দেশের চিকিৎসক বা মনোবিদদের মতে এই পরীক্ষার কোনও বাস্তবতা নেই। কারণ, খুব সহজেই এই পদ্ধতির মাধ্যমে অপরাধী তদন্তের মুখ ভুল দিকেও পরিচালিত করতে পারে। তবে আমেরিকায় এই পলিগ্রাফ টেস্টের রিপোর্টকে এখনও বেশ মান্যতা দেওয়া হয়।”

পলিগ্রাফ টেস্টের সাফল্যের হার কতটা?

ডাঃ অজয় গুপ্ত জানিয়েছেন সাধারণত আদালতে এই পলিগ্রাফ টেস্টের রিপোর্টকে প্রমাণ হিসাবে মান্যতা দিলেও তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতার হার অনেকটাই কম। প্রায় ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ সাফল্য মেলে, ১০০ শতাংশ সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়। এই বিষয়ে তিনি আরও বলেন, “আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন মতে এই পরীক্ষায় ভাল ফল মিলেছে। তবে জাপান বা ভারতের মতো অনান্য দেশের মনোবিদদের মতে এই টেস্টের কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। তাই মতবিরোধ থাকার কারণে শেষ পর্যন্ত ফিজিক্যাল এভিডেন্সকেই বেশি মান্যতা দেওয়া হয়।”

যদিও ডাঃ শোভন দাসের কথায়, “আমেরিকায় তদন্তের ক্ষেত্রে খুব কম ক্ষেত্রে থার্ড ডিগ্রি বা অন্য কোনও চরম পদ্ধতি কম অবলম্বন করা হয় বলে এই টেস্টকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে আদপে এই টেস্টের গুরত্ব সহকারী প্রমাণ হিসাবেই বেশি।”

পলিফগ্রাফ টেস্ট নিয়ে কী বলছে আইন?

এই টেস্ট কিন্তু চাইলেই যখন তখন করা যায় না। বরং তার আগে নির্দিষ্ট কারণ জানিয়ে আদালতে দরখাস্ত করতে হয়। আদালতের অনুমতি পাওয়া গেলে, তখন যাঁর পরীক্ষা করা হবে তাঁর থেকেও অনুমতি পত্র গ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষার সম্পূর্ণ পদ্ধতিও সেই ব্যক্তিকে তাঁর আগে জানানো প্রয়োজন। এরপর সেই ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় পলিগ্রাফ টেস্ট করাতে রাজি হয় তবেই এই পরীক্ষা করা সম্ভব। আর যদি সেই ব্যক্তি অনুমতি না দেন, তা হলে আবার আদালতের দারস্থ হতে হবে। তখন আদালত যা রায় দেবে তাই হবে।

পরীক্ষা করার সময় কেবল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দল উপস্থিত থাকতে পারেন। আর যদি যাঁর পরীক্ষা করা হবে তিনি যদি চান, তবে তাঁর উকিল বা পরিচিত কেউ উপস্থিত থাকতে পারেন, তবে তাও আদালতের থেকে অনুমতি গ্রহণের পরে। এখন এই সব পরীক্ষার ভিডিয়োগ্রাফি করে রাখা হয়। ডাঃ শোভন দাস বলেন, “এই টেস্ট করার জন্য নিরপেক্ষ, শান্ত পরিবেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই কেসের সঙ্গে যুক্ত তদন্তকারী অফিসার বা পুলিশের কেউ কিন্তু এই টেস্টের সময়ে থাকতে পারবেন না। তবে একজন অভিজ্ঞ ফরেন্সিক সাইকোলজিস্ট থাকতে পারেন।”

তবে আরেকটি বিষয় অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য বা আত্মবিশ্বাস বজায় রাখার জন্য পরীক্ষা করার আগে স্টেরওয়েড নিয়ে আসেন অনেক ব্যক্তি। সেক্ষেত্রে যদি তা ধরা পড়ে তখন সেই পরীক্ষার ফলাফল বাতিল হয়ে যায় এবং আদালতের কাছে পুনরায় দরখাস্ত করতে হয়।

তবে পলিগ্রাফ টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে আইনজীবী মহলের আলাদা ব্যাখ্যা রয়েছে। তাঁদের মতে এই রিপোর্ট আদালতে গ্রাহ্য হয় না। এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় আছে। পলিগ্রাফ টেস্ট গ্রাহ্য নয় কারণ এটি ১০০ শতাংশ সত্য বলে প্রমাণিত নয়। মেশিনে সম্পূর্ণ মিথ্যে বা সত্যি ধরা পড়ছে এটাও বলা যায় না। মেশিনের উপর সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নেই আদালতের। বর্ষীয়ান আইনজীবী অমিতেশ ব্যানার্জির মতে এর পরেও পলিগ্রাফি করানো হয় কারণ তদন্তে অনেকসময় একটা দিশা পাওয়া যায়। হঠাৎ করে কোন নতুন তথ্যও পাওয়া যায়।

Next Article