ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস গাছ থেকে আমরা পাই প্রচলিত চা পাতা। গ্রিন টি, ব্ল্যাক টি, হোয়াইট টি— সবই ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস-এর দান। গ্রীষ্ম হোক বা বর্ষা, হাতে এককাপ চা নিয়ে বসলে মেজাজটাই জমে যায়! আর এখন তো আইস টি পানেরও চল হয়েছে যথেষ্ট। ফলে ছোট থেকে বড় সকলেরই প্রিয় হয়ে উঠেছে চা। এছাড়া চা মানেই তা ক্যাফিনমুক্ত। ফলে ক্যাফিন থেকে যাঁদের সমস্যা হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে চা নিশ্চিতভাবে একটি দুর্দান্ত সমাধান। তবে জানলে অবাক হবেন, জবা ফুল দিয়েও তৈরি করা যায় অসাধারণ চা। জবা চায়ের স্বাস্থ্যগুণও প্রচুর। বিশেষ করে নানা স্বাস্থ্যগুণের জন্যই প্রতিদিন সেবন করা যেতে পারে জবা চা। এমনকী আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরাও দিনে অন্তত একবার জবা চা সেবন করতে বলছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, একাধিক কঠিন অসুখ থেকে মুক্তি দিতে পারে জবা চা।
কোলেস্টেরল
অনেকেরই রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা থাকে বিপজ্জনকভাবে বেশি। কোলেস্টেরলের রোগীর জন্য জবা চা তাই হয়ে উঠতে পারে রোগহর ওষুধের মতো উপকারী। রক্তে দ্রুত কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে জুড়ি নেই জবা চায়ের। জবা চা নিয়ে একাধিক সমীক্ষা হয়েছে। সেইসব গবেষণাতেই জানা গিয়েছে এই অনন্য ছোট্ট ফুলটি উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাসে দুর্দান্ত কার্যকরী।
হাইপারটেনশন
হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো যাবে কি না তা নির্ধারণ করে দেয় উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা। এমনকী একজন ব্যক্তির স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে উচ্চ রক্তচাপ ও মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরল। উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট ডিজিজ ও স্ট্রোক— এই তিনটি সমস্যার একটাই সমাধান হতে পারে জবা চায়ের নিয়মিত সেবন। কারণ জবা চা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপও কমাতে সক্ষম। ফলে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও কমতে থাকে। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক দিনে তিনকাপ জবা চা পান করলে তাঁর হাইপার টেনশনের ঝুঁকি কমে যায় বহুগুণ। জবা চায়ের বিস্ময়কর ক্ষমতার কারণ হল, এই চায়ে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট! এছাড়া থাকে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান।
ওজন হ্রাস
আধুনিক জীবনের সবচাইতে বড় অভিশাপ হল স্থূলত্ব! মাত্রাতিরিক্ত দৈহিক ওজনের কারণে ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখ, স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ওজন কমাতে হলে তাই দরকার পড়ে নিয়মিত এক্সারসাইজ ও ডায়েট কন্ট্রোলের। দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে জবা চা। নিয়মিত জবা চা সেবনে বিপাকক্রিয়ার হার বাড়ে। দেহে জমে থাকা ফ্যাট বার্ন হয় দ্রুত।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
করোনা, কোল্ড ফ্লু এবং একাধিক রেসপিরেটরি ডিজিজ হওয়ার পিছনে দায়ী থাকে দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। তবে জবা চায়ে থাকা উপকারী ভিটামিন ও পর্যাপ্ত মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে হুটহাট করে ঠান্ডা সর্দি যেমন লাগে না তেমনই শরীর খারাপ হলেও জলদি আরোগ্য লাভ হয়।
লিভারের স্বাস্থ্য
লিভার ভালো থাকলে সার্বিক স্বাস্থ্যেও তার প্রভাব পড়ে। তাই প্রত্যেকরই উচিত লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতির দিকে নজর দেওয়া। দেখা গিয়েছে নিয়মিত জবা চা সেবন করলে লিভারের ডিটক্সিফাইং এনজাইমের ক্ষরণ বাড়ে। ফলে লিভারের নানা সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। ত্বকও থাকে ভাল।
ভিটামিন
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও নানাবিধ রোগ দূরে রাখতে, ত্বক দীপ্তিময় রাখতে, ত্বকের দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করতে শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিনের জোগান থাকা জরুরি। জবা চায়ে রয়েছে একাধিক ভিটামিন। এছাড়া রয়েছে উপযুক্ত মাত্রায় কপার, আয়রন ও পটাশিয়ামের মতো খনিজ। খনিজগুলি নার্ভের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখে। এইভাবে নার্ভের সমস্যাও দূরে রাখতে পারে জবা চা। জবা চায়ে থাকে অ্যান্থোসায়ানিন যার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে। ফলে নিয়মিত জবা চা সেবন করলে নানা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণও প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।