রায়পুর: মাত্র ১০ মাস বয়সে ভারতীয় রেলওয়েতে নিয়োগ পেল ছত্তীসগঢ়ের এক শিশুকন্যা! তবে, এখনই নয়, ১৮ বছর বয়স হলে, তবে সে এই সরকারি চাকরি পাবে। রেলকর্তাদের মতে, রাজ্যের ইতিহাসে তো বটেই, দেশের ইতিহাসেও সম্ভবত এই প্রথমবার এত কম বয়সের কোনও শিশুকে নিয়োগের প্রস্তাব দিল ভারতীয় রেল। এর জন্য এখন পুঁচকে মেয়েটি বুড়ো আঙুলের ছাপ নিয়ে রাখা হয়েছে। আর তা করতে গিয়ে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এসেছে রেলওয়ে কর্তাদের। শিশুটির পুরো কাহিনি জানলে হয়তো চোখের জল ধরে রাখতে পারবে না কেউই।
শিশুকন্যাটির নাম রাধিকা যাদব। মাত্র ১০ মাস বয়সে রেলের চাকরির প্রস্তাব পেয়ে রেকর্ড করেছে। তবে, রেল তাঁকে চাকরি দিয়েছে সহানুভূতির জায়গা থেকে। মৃত সরকারি কর্মচারীদের পরিবারকে তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে এই ধরনের চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই ক্ষেত্রে এক পথ দুর্ঘটনায় রাধিকার বাবা-মা, দুজনেরই মৃত্যু হয়েছে। জানা গিয়েছে গত ১ জুন, তার বাবা-মা তাকে সঙ্গে নিয়ে মোটরবাইকে করে এক জায়গায় যাচ্ছিলেন। পথে তাঁদের মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে। আশ্চর্জনকভাবে শুধুমাত্র কোলের শিশুটিই বেঁচে যায়। তাই, এই প্রথমবার এত কম বয়সে কাউকে সহানুভূতির চাকরির প্রস্তাব দিতে হল রেলকে। এক পদস্থ রেলকর্তা বলেছেন, ‘ভারতীয় রেলের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও ১০ মাস বয়সী শিশুকে নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হল।’
দক্ষিণ-পূর্ব মধ্য রেলওয়ে বা এসইসিআর-এর (SECR)পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘৪ জুলাই, একটি ১০ মাস বয়সী মেয়েকে দক্ষিণ-পূর্ব মধ্য রেলওয়ের রায়পুর রেলওয়ে ডিভিশনের পার্সোনেল ডিপার্টমেন্টে সহানুভূতিমূলক নিয়োগের জন্য নিবন্ধিত করা হয়েছে। শিশুটির বাবা রাজেন্দ্র কুমার যাদব ভিলাইয়ের এক রেলওয়ে ইয়ার্ডে সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। গত ১ জুন এক সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর এবং তাঁর স্ত্রী মঞ্জু যাদবের মৃত্যু হয়। শিশুটি অবশ্য বেঁচে যায়। নিয়ম অনুসারে রায়পুর রেলওয়ে বিভাগের পক্ষ থেকে রাজেন্দ্র কুমার যাদবের পরিবারকে সমস্ত রকম সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।’
সরকারি বিবৃতির বয়ান খুবই শুষ্ক,আবেগহীন। তবে, রাধিকার নাম রেলওয়ে বিভাগের নথিতে সরকারিভাবে নথিভুক্ত করতে গিয়ে চোখের জল বাধ মানেনি রেল কর্তাদের। নাম সই করার মতো অবস্থায় সে এখনও পৌঁছয়নি। তাই সরকারি নথিতে শিশুটির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়েছে। এক রেল কর্তা জানিয়েছেন, বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর এখন রাধিকার দেখাশোনা করছেন তাঁর ঠাকুমা। তাঁর সঙ্গেই রেলের অফিসে এসেছিল একরত্তি মেয়েটি। যখন তার বুড়ো আঙুলের ছাপ নেওয়া হচ্ছিল তখন রাধিকা কেঁদে উঠেছিল। ওই কর্তা বলেছেন, ‘কাজটা করতে গিয়ে আমাদের বুক ফেটে যাচ্ছিল। এত ছোট বাচ্চার বুড়ো আঙুলের ছাপ নেওয়া আমাদের জন্য কঠিন ছিল।’