নয়া দিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালে, গত ৯ বছরে ২৪.৮২ কোটি মানুষ মুক্তি পেয়েছেন দারিদ্র্যের হাত থেকে। এমনটাই জানাল নীতি আয়োগ। সোমবার (১৫ জানুয়ারি), ‘২০০৫-০৬ সাল থেকে ভারতে বহুমাত্রিক দারিদ্র’ নামে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে নীতি আয়োগ। তাতে বলা হয়েছে, এই সময়কালে দারিদ্র্যের সমস্ত মাত্রাগুলির মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেটাই এই পরিসংখ্যানে ধরা পড়েছে। নীতি আয়োগের সিইও বিভিআর সুব্রহ্মণ্যমের উপস্থিতিতে এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেন নীতি আয়োগের সদস্য অধ্যাপক রমেশ চন্দ। তিনি জানিয়েছেন, অক্সফোর্ড পলিসি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ এবং ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম এই গবেষণাপত্র তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে।
গবেষণাপত্র অনুসারে, বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচকের নিরিখে ২০১৩-১৪ সালে ভারতের ২৯.১৭ শতাংশ মানুষ ছিলেন দারিদ্রসীমার নীচে। আর আজ, অর্থাৎ, ২০২২-২৩ সালে দারিদ্রসীমার নীচে আছেন ভারতের ১১.২৮ শতাংশ মানুষ। অর্থাৎ, গত ৯ বছরে দারিদ্রসীমার নীচে থাকা ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা ১৭.৮৯ শতাংশ কমেছে। রাজ্য হিসেবে ৯ বছরে সবথেকে বেশি মানুষ দারিদ্রসীমার বাইরে বেরিয়ে এসেছেন উত্তর প্রদেশে, ৫.৯৪ কোটি। এরপর আছে বিহার (৩.৭৭ কোটি), মধ্য প্রদেশ (২.৩০ কোটি) এবং রাজস্থান (১.৮৭ কোটি)। বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক সারা বিশ্বে স্বীকৃত। এতে শুধু আর্থিক দিকগুলি নয়, দারিদ্র্যের মূল্যায়নের জন্য অন্যান্য মাত্রারও পরিমাপ করা হয়।
গবেষণাপত্রে আরও দেখা গিয়েছে, যত দিন যাচ্ছে, ততই ভারতের দারিদ্র্য মুক্তির হার বাড়ছে। ২০০৫-০৬ থেকে ২০১৫-১৬ সালের মধ্যে বছরে গড়ে ৭.৬৯ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার বাইরে বেরিয়ে এসেছেন। আর ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৯-২০ সালের মধ্যে দারিদ্রসীমার বাইরে বেরিয়ে এসেছেন বছরে গড়ে ১০.৬৬ শতাংশ মানুষ। বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচকের মোট ১২টি সূচকের ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে ভারত। ২০৩০ সালের মধ্যেই ভারত তার বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক অর্ধেক করার লক্ষ্য নিয়েছে। কিন্তু নীতী আয়োগের অনুমান, এই ক্ষেত্রে যেভাবে এগিয়ে চলেছে ভারত, তাতে সেই সময়ের আগেই এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে ভারত। । সবচেয়ে দুর্বল এবং বঞ্চিতদের জীবন উন্নত করার জন্য সরকারের অবিরাম উত্সর্গ এবং দৃঢ় প্রতিশ্রুতি এই অর্জনে সহায়ক হয়েছে।
নীতি আয়োগ আরও জানিয়েছে, পোষণ অভিযান, অ্যানিমিয়া মুক্ত ভারতের মতো ভারত সরকারের উদ্যোগগুলি স্বাস্থ্য পরিষেবাকে সকলের নাগলে এনে দিয়েছে। ফলে বঞ্চনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এছাড়া, জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইনের অধীনে, পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের মাধ্যমে দেশের ৮১.৩৫ কোটি অভাবী মানুষকে খাদ্যশস্য সরবরাহ করে সরকার। সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার অধীনে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণের প্রকল্পের মেয়াদ আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে। মাতৃস্বাস্থ্য, উজ্জ্বলা যোজনা, বিদ্যুত বন্টনের উন্নয়ন, স্বচ্ছ ভারত অভিযান, জল জীবন অভিযানের মতো সরকারি প্রকল্পগুলি সম্মিলিতভাবে ভারতীয়দের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ঘটিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মত প্রকল্পগুলি আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং অভাবীদের মাথা গোঁজার জায়গা দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।