কলকাতা: ‘অপা’র সম্পত্তি অপার। ২০২২ সালে চায়ের দোকান থেকে পাড়ার রক, অফিস-কাছারি থেকে গৃহস্থের হেঁশেল- সর্বত্রই চর্চার বিষয় ছিল রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া বিপুল টাকা এবং তার উৎস। শিক্ষা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী অর্পিতার টালিগঞ্জ ও বেলঘরিয়ার ফ্ল্য়াটে তল্লাশি চালিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা উদ্ধার করেছিল ইডি। খাটের ভিতর, দেওয়ালে, এমনকী বাথরুমের ভিতর থেকেও উদ্ধার হয়েছিল ৫০০ ও ২০০০ টাকার বান্ডিল। সেই প্রথম টাকার পাহাড় দেখেছিল রাজ্যবাসী। পার্থ-অর্পিতার বাড়ি থেকে ৫০ কোটিরও বেশি টাকা উদ্ধার হয়েছিল। সঙ্গে উদ্ধার হয়েছিল বিপুল পরিমাণ সোনা-দানা। এরপরে রাজ্যের একাধিক জায়গায় টাকার পাহাড় উদ্ধার হয়েছে। তবে পার্থ-অর্পিতার বিপুল সম্পত্তির মতো নজর কাড়তে পারেনি অন্যরা। তবে বছর ঘুরে যখন শেষ পর্যায়ে, তখন ফের মিলল টাকার পাহাড়ের খোঁজ। এবার উদ্ধার হওয়া টাকার পরিমাণ আরও অনেক বেশি। এখনও অবধি ২৯০ কোটি গুনতে পেরেছে আয়কর দফতর। আরও কমপক্ষে ১৯ বস্তা টাকা গোনা বাকি।
২০২২ সালের ২৭ জুলাই রাজ্যের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে হানা দেয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সেই রাতেই হানা দেওয়া হয় টালিগঞ্জের অভিজাত একটি আবাসনেও। সেখানে থাকতেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। ২৮ জুলাইও দিনভর তল্লাশি চলে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের একাধিক ফ্ল্যাটে। তল্লাশি চালিয়ে মোট ৪৯.৮০ কোটি টাকা নগদ ও ৫.০৮ কোটি টাকার সোনা ও গয়না বাজেয়াপ্ত করা হয়।
তদন্ত যত এগোয়, ততই পার্থ-অর্পিতার আরও সম্পত্তির হদিস মিলতে থাকে। শান্তিনিকেতনে বাড়ি থেকে বেলঘড়িয়ার ফ্ল্যাট- নিয়োগ দুর্নীতিতে ১০৩ কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ইডি। ৪০টি অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, যার বাজার দর ৪০.৩৩ কোটি টাকা। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৩৫টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও, যেখানে ৭ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা জমা ছিল।বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাট, বাগানবাড়ি, জমি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। এ ছাড়া শেল কোম্পানির নামেও রয়েছে বেশ কিছু সম্পত্তি।
২০২৩ সালের শেষে এসে পার্থ-অর্পিতাকে টক্কর দিতে বাজারে এলেন ধীরজ সাহু। কংগ্রেসের ঝাড়খণ্ডের রাজ্যসভার সাংসদ তিনি। মদের ব্যবসায় আর্থিক বেনিয়মের সূত্র ধরেই বুধবার তাঁর বাড়িতে হানা দেয় আয়কর দফতর। বাড়িতে ঢুকে আলমারি খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ আয়কর আধিকারিকদের। প্রায় ৪ ফুট চওড়া আলমারিতে শুধুই টাকার বান্ডিল রাখা। বাড়িতে রাখা বাক্সগুলির ভিতরেও থরে থরে সাজানো টাকা। সাংসদের বাড়ির টাকা গুনতে গিয়ে বিকল হয়ে যায় টাকা গোনার মেশিন। ফের আনানো হয় মেশিন। শনিবার সকাল অবধি ২৯০ কোটি টাকার হদিস মিলেছে সাংসদ ও তার সহকারীর বাড়ি থেকে। এখনও ১৯ বস্তা টাকা গোনা বাকি। বছর শেষের লাইমলাইটে আপাতত রাজ্যসভার এই সাংসদই।