ইম্ফল: ৩ মে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের এক মিছিলকে কেন্দ্র করে হিংসার সূত্রপাত হয়েছিল মণিপুরে। আজ সোমবার, ৩ জুলাই। দুই মাস কেটে গেলেও, উত্তর পূর্বের এই রাজ্যের পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। রবিবার ভোরেও এই অন্তত ৪ জন রাজ্যবাসী এই হিংসার শিকার হয়েছেন। তারমধ্যে, এক ব্যক্তির শিরশ্ছেদ করে, কাটা মাথাটি টাঙিয়ে দেওয়া হয় বাঁশের মাথায়। বাকি তিনজনকে গুলি করা হয়েছে। রাজ্যে কিন্তু অন্তত ৩৬,০০০ কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি এখনও বদলায়নি।
রবিবার ভোরের হিংসা সম্পর্কে মণিপুরের এক সরকারি আধিকারিক জানিয়েছেন, মেইতেই অধ্যুষিত বিষ্ণুপুর জেলার খুইজুমান তাবি এলাকায় এক মেইতেই গ্রামে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মাঝরাতে, পার্শ্ববর্তী কুকি অধ্যুষিত চুরাচাঁদপুর জেলা থেকে গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ। ওই তিন ব্যক্তি রাতে গ্রাম পাহারা দিচ্ছিলেন। ওই তিন ব্যক্তির মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে চুরাচাঁদপুরে লাংজা এবং চিংলাংমেই নামে দুটি কুকি গ্রামে ভোরের দিকে হামলা চালায় মেইতেইরা। ভোর সাড়ে তিনটে ছথেকে ভোর ৪টের মধ্যে এই হামলা হয়। সেখানেই এক ব্যক্তির মাথা কেটে বাঁশের বেড়ায় টাঙিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সেই সঙ্গে দুই গ্রাম মিলিয়ে প্রায় ৩০টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মাথা কাটা ব্যক্তির ধড়ের অংশটি একটি জ্বলতে থাকা বাড়ির মধ্যে ফেলে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা।
ওই ব্য়ক্তির নাম ডেভিড হামার বলে জানিয়েছে, কুকি উপজাতিদের সংগঠন, আইটিএলএফ। সংগঠনটি বলেছে, “আততায়ীরা নৃশংসভাবে তাঁর ঘাড় থেকে মাথাটি কেটে আলাদা করে দেয় এবং একটি বেড়ার উপর তার মাথাটি রেখে দেয়। তারপর, তাঁর মৃতদেহকে একটি আগুনে জ্বলতে থাকা বাড়ির মধ্যে ফেলে দেয়।” এই হত্যার প্রেক্ষিতে কুকিদের সংগঠনটি দাবি করেছে, মেইতেই হামলাকারীদের কাছে উপজাতীয় সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনের কোনও দাম নেই। তাদের আরও অভিযোগ, গ্রামের অন্তত পাঁচজনকে অপহরণ করা হয়েছে। তবে প্রশাসনের কাছে এই বিষয়ে কোনও খবর নেই।
রবিবার ভোরের এই ঘটনার পর, বিষ্ণুপুরের মেইতেই গ্রামটিতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। চার ঘণ্টারও বেশি সময় ছিলেন সেখানে। নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁকে সামনে পেয়ে, ‘কুকি জঙ্গি’দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান গ্রামবাসীরা। প্রায় ৩,০০০-এর বেশি বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী তাঁকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখান। এই ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান তাঁরা। তবে, পার্শ্ববর্তী কুকি অধ্যুষিত চুরাচাঁদপুরে যাননি মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সেখানে নেই।
আসলে, আইটিএলএফ-সহ কুকিদের সবকটি সংগঠনই মনে করে, রাজ্যের এই হিংসার জন্য বীরেন সিং সরকারই দায়ী। এমনকি, তাঁর ইস্তফাও দাবি করেছে কুকিরা। আইটিএলএফ এবং অন্যান্য কুকি সংগঠনগুলি রাজ্যে এখনও কেন রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়নি, সেই প্রশ্নও তুলেছে। তবে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ যাতে না আটকায় তার জন্য ২ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে অবশেষে অবরোধ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুকিরা। গত ৫৪ দিন ধরে চলছিল এই পথ অবরোধ। তবে, হিংসা বন্ধের এখনও কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না।