ভুবনেশ্বর: দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ পার করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার (Coromandel Express Accident)। গত ২ জুন, শুক্রবার ওড়িশার বালেশ্বরের (Balasore) বাহানগার কাছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার মুখে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় একটি মালগাড়ির সঙ্গে, ধাক্কা লাগে ডাউন যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের সঙ্গেও। এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ২৮৮ জন। আহত ৭০০-রও বেশি যাত্রী। কিন্তু একটা দুর্ঘটনার জেরে তো আর জীবন থেমে থাকে না। দ্রুত যাতে রেল পরিষেবা স্বাভাবিক ছন্দে ফেরে, তার জন্য দুর্ঘটনার পরদিন থেকেই উদ্ধারকাজের পাশাপাশি শুরু হয়ে গিয়েছিল রেললাইন সারাইয়ের কাজও। দেশে যেহেতু রেলপরিষেবার উপরে বহু মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে, সেই কারণে লাইন মেরামতির কাজ দ্রুততার সঙ্গে করতে নিজে দাঁড়িয়ে নজরদারি করেছিলেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বীনী বৈষ্ণব (Ashwini Vaishnaw)। মাত্র আড়াইদিনের মধ্যেই সারাই হয়ে যায় ট্রেন লাইন। তিনদিন পর সফল ট্রায়াল রান হতেই স্বাভাবিক ট্রেন চলাচল শুরু হয়। বুধবারই ফের করমণ্ডল এক্সপ্রেস পার করে দুর্ঘটনাস্থল বাহানগা দিয়ে। কিন্তু দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজ, সংস্কার, এই নতুন রেলপথ তৈরি- যাবতীয় কাজের পিছনে রেলকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা অনেকেরই অজানা।
বাহানগার দুর্ঘটনার পরই রেল মন্ত্রকের তরফে একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে রেল পরিষেবা স্বাভাবিক করতে কী কী কাজ করতে হবে, তা নথিভুক্ত করা হয়। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেই তালিকা-
দুর্ঘটনাস্থল থেকে সরাতে হয়েছে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া কোচগুলি।
কামরার ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয় যাত্রীদের দেহ।
রেল ট্রাকেই সাদা চাদর পুড়িয়ে শুইয়ে রাখা হয় দেহগুলি।
ভেঙে যাওয়া রেল ট্রাকগুলি সরানো ও মোরামতি।
আহতদের ওড়িশার বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া।
নতুন রেললাইন পাতা, বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থা।
উদ্ধারকাজের পাশাপাশি বহু নেতা-মন্ত্রীরাই দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসায়, ভিআইপিদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা ব্যবস্থা করা।
একদিকে যেখানে কয়েক হাজার এনডিআরএফ, ওডিআরএফ, পুলিশ, সেনাবাহিনী মিলিতভাবে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছিল, ঠিক সেভাবেই যুদ্ধকালীন তৎপরতা দেখা যায় রেল মন্ত্রকের ওয়ার রুমেও, যেখানে কর্মীরা একটানা ৫১ ঘণ্টা ধরে কাজ করেছিলেন। দেহ উদ্ধার থেকে শুরু করে নতুন রেললাইন পাতা, ট্রেন বাতিল, রুট বদল-যাবতীয় কাজই তাঁরা ওয়ার রুম থেকে বসে নিয়ন্ত্রণ করছিলেম। পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা-দুই রাজ্যের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ রাখে রেল মন্ত্রকের ওয়ার রুমের ৮টি দল, যাতে মোট ৫০ থেকে ৭০ জন সদস্য ছিল। পাশাপাশি রেলের ডিআরএম ও জেনারেল ম্যানেজারদেরও গোটা প্রক্রিয়ায় নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া রেলওয়ে বোর্ডের সদস্যরাও ওয়ার রুম থেকে নজরদারি করেন।
উদ্ধারকাজে কোন দলের কী প্রয়োজন, প্রতি আট ঘণ্টা অন্তর বিকল্প কর্মী ও সামগ্রী পাঠানোর জন্য দিল্লির ওয়াররুম থেকে মোট ৫টি ক্যামেরায় নজরদারি রাখা হচ্ছিল। ৭০ জনের একটি বিশেষ দল বাহানগায় রেললাইন ও ওভারহেড ইলেকট্রিক লাইন সারাই করে বলে জানা গিয়েছে।