নয়া দিল্লি: মূল্যবৃদ্ধি থেকে বেকারত্ব, পেগাসাস থেকে আদানি, যেকোনও ইস্যুতেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সংসদে সুর চড়িয়েছে বিরোধী দলগুলি। সেখানেই প্রতিবার দেখা গিয়েছে, বাকি বিরোধী দল, বিশেষ করে কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেস। একই ইস্যু নিয়ে সরব হলেও, কংগ্রেসের থেকে এক হাত দূরে থেকে বিক্ষোভ দেখিয়েছে তৃণমূল। প্রতিবারই সংসদে অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে বিরোধী দলগুলির অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে বৈঠক ডাকে কংগ্রেস। বিগত কয়েকটি অধিবেশনের চিত্র দেখলেও নজরে আসবে যে কংগ্রেসের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে তৃণমূল। অধিবেশনে যোগ দিলেও, কংগ্রেসের ডাকা বৈঠক তবে সম্প্রতিই সেই চিত্রে কিছুটা বদল আসে। রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজেরও যেমন নিন্দা করে তৃণমূল, তেমনই আবার নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কটের চিঠিতেও পাশাপাশি সাক্ষর দেখা গিয়েছিল কংগ্রেস-তৃণমূলের। তবে কি দুই দলের মধ্যে দূরত্ব কমছে ধীরে ধীরে নাকি সবটাই দেখানো? নীতীশ কুমারের ডাকা বিরোধী দলের বৈঠক যতই এগিয়ে আসছে, ততই বিরোধী দলগুলির মধ্যে যে চাপানউতোর রয়েছে, তা কোন রূপ নেবে, সেটি ঘিরেও প্রশ্ন উঠছে।
আগামী ২৩ জুন বিহারের (Bihar) পটনায় মুখোমুখি হতে চলেছেন সমমনস্ক একাধিক বিরোধী দল। এই বৈঠকে একদিকে যেমন আমন্ত্রণ পেয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee), তেমনই আবার কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) থেকে শুরু করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীবাল (Arvind Kejriwal), সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবও (Akhilesh Yadav)। বুধবারই বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব জানান, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও এই বৈঠকে যোগ দেবেন। তামিলনাড়ু মুখ্য়মন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন(MK Stalin)-ও ২৩ জুনের বিরোধী বৈঠকে আসবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
গত বছর এনডিএ শিবির থেকে বেরিয়ে এসে কংগ্রেস, আরজেডি সহ ৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট বেঁধে বিহারে নতুন সরকার গঠন করেন জেডি(ইউ) নেতা নীতীশ কুমার। সেই সময় থেকেই বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে একজোট করার কাজে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছিলেন। সম্প্রতিই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দিল্লির মুখ্য়মন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল সহ একাধিক অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্বদের সঙ্গেও দেখা করেন নীতীশ কুমার। দীর্ঘ টালবাহানার পর ঠিক করা হয়, আগামী ১২ জুন পটনায় নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে বিরোধী জোটের বৈঠক বসবে। তবে গত সপ্তাহেই হঠাৎ সেই বৈঠকের দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়। পরে জানা যায়, ওই সময়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বিদেশ সফরে থাকায় এবং তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি থাকায় বৈঠকের দিন পিছিয়ে ২৩ জুন করা হয়েছে।
২৩ তারিখের বৈঠকে একদিকে যেখানে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তাঁর দলের অন্যতম সমালোচক তথা প্রতিদ্বন্দ্বী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরীবাল ও অখিলেশ যাদবের মুখোমুখি হবেন। অন্য়দিকে, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর অন্যতম বিরোধী দল বামফ্রন্টের মুখোমুখি হবেন। এই বৈঠক জোটের আলোচনার জন্য ডাকা হলেও, একসঙ্গে এতগুলি বিরোধী দল একজোট হওয়ায় অস্বস্তিতেও পড়তে পারে কিছু দল। কংগ্রেস-তৃণমূল যেমন একাধিক ইস্যুতে ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে দীর্ঘদিন ধরে, তেমনই আবার রাজ্যে একে অপরের বিরোধী দলগুলি জাতীয় স্তরে একজোট হবে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তা সে তৃণমূল বনাম সিপিআইএমই হোক বা আম আদমি পার্টি বনাম কংগ্রেসের লড়াই। রাজ্যে যেখানে চুলোচুলি করে এই দলগুলি, সেখানেই জাতীয় স্তরে তাদের মধ্যে ভাব হয়ে যাবে হঠাৎ?
বুধবারই জনতা দল ইউনাইটেডের জাতীয় সভাপতি রাজীব রঞ্জন জানান, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা উদ্ধব ঠাকরে, এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারও এই বৈঠকে যোগ দেবেন।