নয়াদিল্লি: ‘স্পেশাল ২৬’-এর মতো ভুয়ো অফিসার সেজে হানা নয়। শুধুমাত্র ফোনে সিবিআই, আয়কর দফতরের অফিসার পরিচয় দিয়েই ৮৫ লক্ষ টাকার প্রতারণা। প্রতারণার শিকার হলেন অন্ধ্র প্রদেশের বিশাখাপত্তনমের এক প্রৌঢ়। একটি বহুজাতিক সংস্থার প্রাক্তন পদস্থ কর্তা ছিলেন তিনি। ২ দিন ধরে স্কাইপে ‘জিজ্ঞাসাবাদ’-এর পর তাঁর কাছ থেকে ৮৫ লক্ষ টাকার চেক হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা। এই নিয়ে বিশাখাপত্তনমে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আবার ওই ৮৫ লক্ষ টাকা দিল্লির উত্তম নগরে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখায় রানা গারমেন্টস নামে একটি সংস্থার মাধ্যমে ১০৫টি অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে প্রতারকরা। ঘটনার তদন্ত করছে বিশাখাপত্তনম ও দিল্লির পুলিশ।
প্রতারিত ওই ব্যক্তি বলেন, “আমার আরও তিনবছর চাকরি বাকি ছিল। কিন্তু, আমি স্বেচ্ছাবসর নিই। ছেলেকে বিদেশের কলেজে পড়াতে চাই। সেজন্য তাকে প্রস্তুত করতেই স্বেচ্ছাবসর নিই আমি। ২ মে রিটায়ারমেন্ট সেটেলমেন্ট হয়। আমার ছেলের ভিসা অ্যাপয়নমেন্ট ছিল ১৭ মে। কিন্তু, ১৪ মে ওই গ্যাং আমার ৮৫ লক্ষ টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়। তারা আমায় জানিয়েছিল, রেকর্ড পরীক্ষা করে সব টাকা ফেরত দেওয়া হবে।” কথা কথা বলতে দৃশ্যত ভেঙে পড়েন বছর সাতান্নর ওই ব্যক্তি।
কীভাবে প্রতারিত হলেন বহুজাতিক সংস্থার প্রাক্তন ওই কর্তা-
FIR-এ বহুজাতিক সংস্থার প্রাক্তন ওই কর্তা জানিয়েছেন, তাঁর অ্যাকাউন্টে সংস্থা থেকে স্বেচ্ছাবসরের টাকা আসার পর তাঁর মোবাইলে একজন ফোন করেন। ওই ব্যক্তি নিজেকে সাইবার ক্রাইমের ডিসিপি বলসিং রাজপুত বলে পরিচয় দেন। বলসিং রাজপুত তাঁকে জানান, একাধিক নার্কোটিক এবং আর্থিক প্রতারণা মামলায় তাঁর নাম উঠে এসেছে। এবং তাঁর আধার নম্বরও ওই মামলাগুলিতে যোগ হয়েছে। একথা শুনে ঘাবড়ে যান বহুজাতিক সংস্থার প্রাক্তন ওই কর্তা। তখন বলসিং রাজপুত অন্য একটি নম্বরে ফোন করেন। এবং জানান, উনি তাঁর ঊর্ধ্বতন অফিসার। বলসিং রাজপুত এবং ওই অফিসার নিজেদের মধ্যে কথা বলতে শুরু করেন। বহুজাতিক সংস্থার প্রাক্তন এই কর্তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রতারিত ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, “তাঁদের কথা শুনে আমি ঘাবড়ে যাই। তখন নিজেকে ঊর্ধ্বতন অফিসার হিসেবে পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি বলেন, আপনাকে দেখে নির্দোষ মনে হচ্ছে। ঠিক আছে, তদন্তের জন্য আপনার ৮৫ লক্ষ টাকা আমরা এখন নিচ্ছি। সব কাগজপত্র মিলিয়ে দেখব। ঠিক থাকলে আপনার টাকা ফেরত দেওয়া হবে। ২ দিন ধরে স্কাইপে আমায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখানে সিবিআই, আয়কর দফতর, নার্কোটিক বিভাগ, কাস্টমসের ভুয়ো অফিসাররা ছিলেন।” এই ২ দিন প্রতারিত ওই প্রৌঢ়কে বাড়ির বাইরে যেতে দেয়নি প্রতারকরা। এমনকি কারও সঙ্গে ফোনেও যোগাযোগ করতে দেয়নি।
বহুজাতিক সংস্থার প্রাক্তন ওই কর্তা সন্দেহ প্রকাশ করেন, বিশাখাপত্তনমে ব্যাঙ্কের কোনও কর্মী এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন। সন্দেশ প্রকাশ করার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খুঁটিনাটি তথ্যও জানে ওই গ্যাং। এমনকি, স্বেচ্ছাবসর নিয়ে তিনি কত টাকা পেয়েছেন, সেই তথ্যও রয়েছে তাদের কাছে। প্রৌঢ় ওই ব্যক্তি বলেন, “আমাকে নিকটবর্তী ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখায় যেতে বলে ওই গ্যাংয়ের লোকেরা। এবং চেকটা জমা দিতে বলে।”
বিশাখাপত্তনম ক্রাইম ব্যাঞ্চ ঘটনার তদন্তভার নিয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, বেশ কিছু সূত্র পেয়েছে তারা। বেসরকারি ওই ব্যাঙ্কের শাখা থেকে বেশ কিছু নথি সংগ্রহ করেছে। প্রতারিত প্রৌঢ় বলেন, “পুলিশকে আমি বলেছি, ওই ব্যাঙ্কের দিল্লির উত্তম নগর শাখা রানা গারমেন্টসের কেওয়াইসি পূরণ করেছিল কি? দিল্লি পুলিশ রানা গারমেন্টসের দেওয়া ঠিকানায় গিয়েছিল। কিন্তু, সেখানে অন্য সংস্থার অফিস। রানা গারমেন্টসের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।”
প্রতারিত প্রৌঢ় অভিযোগ করেন, পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে বলে জানিয়েছে। কিন্তু, তদন্ত কতদূর এগিয়েছে, তা নিয়ে কোনও কিছু বলছে না।
বহুজাতিক সংস্থার প্রাক্তন ওই কর্তা সবাইকে সাবধান করে বলেন, “অচেনা নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিয়ো কল ধরবেন না। প্রতারণার পরিমাণ শুনলে যে কেউ চমকে উঠবেন। এক মাসে বিশাখাপত্তনম সাইবার পুলিশ ৩০০ কোটি টাকা প্রতারণা অভিযোগ পেয়েছে।”