চণ্ডীগঢ়: তিন বছর বয়সেই অ্যাসিড হামলায় (Acid Attack) পুড়ে গিয়েছে দেহের একাংশ। কিন্তু জলে যায়নি উৎসাহ, প্রতিভা। দীর্ঘ ৬ বছর হাসাপাতালে ভর্তি থাকার পরও দৃষ্টিশক্তি ফেরেনি। তখন থেকেই ব্রেইল স্ক্রিপ্টে পড়াশোনা শুরু। নিত্য নতুন লড়াইয়েরও সূত্রপাত। সেই অদম্য ইচ্ছেতেই ভর করে নিজের সিবিএসই পরীক্ষায় নিজের স্কুলে প্রথম হল চণ্ডীগঢ়ের কাফি। তার এই ফলাফল মুখে হাসি ফুটিয়েছে তার পিওন বাবারও। কাফির এই গল্প থেকেই শিক্ষা নেবে দেশের আরও অনেক পড়ুয়া।
কথায় বলে কষ্ট করলেই কেষ্ট মেলে। কাফির ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে। ছেলেবেলায় আনন্দ-ফূর্তির স্বাদ কাফি পায়নি। কিন্তু সিবিএসই দশম শ্রেণিতে স্কুলের সেরা ছাত্রী হওয়ার জয় সে আগলে নিয়েছে। পৃথিবীর আলো সে হয়ত দেখতে পায় না। কিন্তু এই ফলাফলের পর মা-বাবার মুখের হাসি বা তাঁদের অনন্দ অশ্রু ঝরে পড়ার শব্দ হয়ত সে উপলব্ধি করতে পারছে। এর পিছনে সব কৃতিত্বই তার। নিজের পরিবারকে সেই সুযোগ করে দিতে পেরেছে কাফি। সিবিএসই দশম শ্রেণিতে ৯৫.০২ শতাংশ নম্বর পেয়েছে কাফি। স্কুলে সবথেকে বেশি নম্বর পেয়েছে কাফিই।
১৫ বছরের কাফির বাবা পিওনের কাজ করেন। তখন কাফির বয়স তিন, যখন এক প্রতিবেশী তার উপর অ্য়াসিড হামলা চালায়। এরপর তার সম্পূর্ণ মুখটা পুড়ে যায়। তারপর ছেলেবেলা কোনদিক থেকে হাসপাতালের বিছানাতেই কেটে গিয়েছে তার টের পায়নি কাফি। ৬ বছর হাসাপাতালে ভর্তি ছিল সে। নিজের দৃষ্টিশক্তিও হারায়। তখন থেকেই ব্রেইল স্ক্রিপ্টে পাকানো শুরু কাফির। ব্রেইলে খুব তাড়াতাড়ি পড়তে পারে কাফি। তারই প্রতিফলন মিলল এই ফলাফলে। আজ সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে কাফি জানিয়েছে, সে একজন আইএএস অফিসার হতে চায়। তার বাবা-মায়ের গর্ব হয়ে উঠতে চায় সে। কাফির পছন্দের বিষয় হল ভূগোল। এই সাফল্যের গোটা কৃতিত্ব সে তার বাবা-মাকেই দিয়েছে। কাফি জানিয়েছে, মা-বাবার মানসিক সমর্থন ও শিক্ষিকাদের জন্যই এই সাফল্য এসেছে। পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ইউটিউব ও ইন্টারনেটও তাকে অনেকটা সাহায্য় করেছে।
মেয়ের এই সাফল্যে কাফির বাবা বলেছেন, “আমরা কাফির জন্য গর্বিত এবং সে পরবর্তীতে যা করতে চায় তাতে ওকে সমর্থন করব এবং তার স্বপ্ন পূরণের জন্য দিনরাত কাজ করব।” আর খুশিতে বিহ্বল কাফির মাও। তিনি বলেন, “কাফি পড়াশোনায় ভাল এবং আমি তা নিয়ে গর্বিত। এটি আমাদের সমাজে মাথা উঁচু করে হাঁটার সুযোগ দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।”