জোশীমঠ: চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে জোশীমঠ (Joshimath)। একাধিক বাড়িঘর-রাস্তায় ফাটল, ভূমিধসের কারণে ঘরছাড়া হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। সরকারের তরফেও জোশীমঠ নিয়ে জারি করা হয়েছে সতর্কবার্তা। বদ্রীনাথের শীতকালীন ঠিকানা জোশীমঠকে মানুষের বসবাস অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে, ইসরোর (ISRO) উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে, কীভাবে ধসে যাচ্ছে গোটা উপত্যকার মাটি। বিগত ১২ দিনেই সেখানে সাড়ে পাঁচ ইঞ্চি মাটি ধসে গিয়েছে। জোশীমঠের এই ধসের কারণে একদিকে যেমন জনজীবন, পর্যটন প্রভাবিত হয়েছে, তেমনই চিন সীমান্ত লাগোয়া বাঁধ, সড়কপথ ও মিলিটারি ক্যাম্পগুলিও বিপদের মুখে পড়েছে। তবে বিপর্যয় কিন্তু জোশীমঠেই সীমায়িত থাকছে না। আবহাওয়াবিদ ও ভূতাত্ত্বিকরা জানিয়েছেন, উত্তরাখণ্ডের ৬০০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত জোশীমঠের পাশাপাশি আরও বেশ কিছু জেলা এভাবেই তলিয়ে যেতে পারে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ১৯৭০-র দশক থেকে জোশীমঠ সহ উত্তরাখণ্ডের বিস্তীর্ণ এলাকার অবস্থান ও ভূমিধসের সম্ভাবনা নিয়ে একাধিকবার সতর্ক করা হলেও, তা কানে তোলা হয়নি। সেই অবহেলার কারণেই আজ জোশীমঠের এই বিপর্যয়। এবার একই বিপর্যয় নেমে আসতে পারে এই অঞ্চলগুলিতেও-
তেহরি– ইতিমধ্যেই উত্তরাখণ্ডের এই অঞ্চলের একাধিক বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই তেহরি বাঁধ হল ভারতের উচ্চতম বাঁধ। এখানে দেশের অন্য়তম বড় হাইড্রো-ইলেকট্রিক পাওয়ার প্রজেক্টও রয়েছে। বাঁধ ও হাইড্রোপাওয়ার প্রকল্পের কারণেই তেহরির ভিত আলগা হয়ে গিয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। যেকোনও দিনই বিপর্যয় নেমে আসতে পারে এই অংশগুলিতেও।
মানা- এটি দেশের শেষ গ্রাম। ও প্রান্ত থেকেই শুরু হচ্ছে চিনের সীমান্ত। এই কারণে পর্যটনের পাশাপাশি প্রতিরক্ষার দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই গ্রাম। বর্তমানে মানা গ্রামের সঙ্গে সংযোগ বাড়ানোর জন্য জাতীয় সড়কের কাজ চলছে। এই প্রকল্প নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা। একদিকে যেমন বন্যপ্রাণীদের প্রাকৃতিক বাসস্থান ধংস হবে এই জাতীয় সড়ক প্রকল্পের কারণে, তেমনই ভূমিধসের সম্ভাবনাও কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। ইতিমধ্যেই মানা গ্রাম থেকে বেশ কিছু সেনা বাহিনীদের জোশীমঠের আশপাশের এলাকায় সরিয়ে আনা হয়েছে।
ধারাসু– এই পাহাড়ি শহরও প্রতিরক্ষার দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিমাচলের সীমান্তগুলিতে সেনা ও সামরিক অস্ত্রশস্ত্র এই পথ ধরেই পাঠানো হয়।
হার্শিল- এটি একদিকে যেমন পুণ্যার্থীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় কেন্দ্র, তেমনই সেনাবাহিনীও উত্তরাখণ্ডের সামরিক কার্যকলাপের জন্য এই শহরকে ব্যবহার করে। ২০১৩ সালের হড়পা বানের সময় এই শহরেই সাধারণ মানুষকে উদ্ধার করে আনা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এই শহরেও একাধিক জায়গায় ধস দেখা দিচ্ছে।
গৌচার – জোশীমঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এই অঞ্চলটি অন্যতম সেনাঘাঁটি। ২০১৩ সালের বিপর্যয়ের সময় বায়ুসেনার উদ্ধারকাজ এখান থেকেই পরিচালিত হয়েছিল।
পিথোরাগড়- উত্তরাখণ্ডের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কেন্দ্র হওয়ার পাশাপাশি এটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র ও সামরিক ঘাঁটিও। এখানে একটি এয়ারস্ট্রিপও আছে, যা সামরিক কার্যকলাপের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জোশীমঠের বিপর্যয়ের প্রভাব এই অঞ্চলেও দেখা যাচ্ছে ধীরে ধীরে।