পটনা : বেশ কয়েকদিন ধরেই বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল এনডিএ শরিক জেডিইউ নেতা তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের। ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার থেকে জাতিভিত্তিক আদম শুমারিতে বিজেপির নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান করতে দেখা গিয়েছে নীতীশ কুমারকে। সম্প্রতি অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে জেডিইউ-র নিশ্চুপ থাকা আরও একবার এই জেডিইউ-বিজেপি ফাটলের বিতর্কে আরও কিছুটা ঘি ঢালল। গতকালই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অগ্নিপথ নিয়ে প্রথম মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন যে, দেশের নাগরিকদের মঙ্গলের জন্য সরকারের তরফে বিভিন্ন পদক্ষেপ করা হয়। কিন্তু তাতে রাজনীতির রং লেগে আসল উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। কিন্তু এবার অগ্নিপথকে কেন্দ্র করেই তৈরি হচ্ছে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ।
এক সপ্তাহ আগে তিন প্রতিরক্ষা বাহিনীতে নিয়োগের জন্য অগ্নিপথ প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়েছে। তারপর থেকেই দেশ জুড়ে বিক্ষোভে সামিল হয়েছে তরুণ প্রজন্ম। বিহারে সেই বিক্ষোভ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ট্রেন। সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করে বিক্ষোভকারীরা। এই হিংসার ঘটনায় প্রথমদিকে কোনওরকম পদক্ষেপ না করার অভিযোগ উঠেছিল বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। প্রথম থেকেই এই প্রকল্পের সঙ্গে একমত হয়নি বিজেপির শরিক দল জেডিইউ। এই নিয়ে বিজেপি-জেডিইউ-র মধ্যে চাপা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, এক বর্ষীয়ান মন্ত্রী বিজেন্দ্র প্রসাদ যাদব কেন্দ্রকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলার জন্যেও প্রকাশ্যে আবেদন করেছিলেন। জেডিইউ-র তরফে এই ঘটনায় খুশি নয় বিজেপি- এমনটাই জানা গিয়েছে। এদিকে রাজ্যে বিক্ষোভের ঘটনায় কোনও পদক্ষেপ না করার সুযোগ নিয়ে জেডিইউ নেতারা প্রতিবাদে মদত দিয়েছেন বলে অভিযোগ বিজেপির তরফে। সেই বিক্ষোভ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সরকারি সম্পত্তির ধ্বংসও করা হয়েছে। এই প্রতিবাদে নষ্ট করা হয়েছে বিজেপির একাধিক দফতরও। গত শনিবার বিহার বিজেপির সভাপতি সঞ্জয় জয়সওয়াল প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছিলেন যে, প্রশাসন চোখ বন্ধ করে রয়েছে। তিনি তাঁর বক্তব্যের সপক্ষে একটি ভিডিয়োও দেখান। সেখানে দেখা যায় বিহার পুলিশ জওয়ানের চোখের সামনেই বিজেপির পার্টি অফিস ভাঙচুর করা হচ্ছে। এদিকে বিজেপি নেতার এই দাবিকে তাঁর ‘মানসিক ভারসাম্যহীনতার’ প্রমাণ বলে তোপ দেগেছেন নীতীশ ঘনিষ্ঠ রাজীব রঞ্জন।
নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে বিজেপির মূল অভিযোগ, প্রথম থেকেই এই অগ্নিপথ নিয়ে বিক্ষোভ দমনে কোনও পদক্ষেপ করেনি নীতীশ কুমার। এমনকী একটি টুইট করে বা বিবৃতি জারি করে শান্তি স্থাপনের বার্তাও দেননি। উল্লেখ্য, বিহারে গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই বিজেপি ও জেডিইউ-র মধ্যে ক্রমেই দূরত্ব বেড়েছে। অগ্নিপথ বিক্ষোভ ঘিরে সেই দূরত্ব আরও কিছুটা বাড়ল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে দুই রাজনৈতিক দলের ঠান্ডা লড়াইয়ে আদতে ক্ষতি হচ্ছে বিহারের সাধারণ মানুষের। এই সুযোগে মাঠে নেমেছেন ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর। তিনি টুইটে জানিয়েছেন, ‘বিহার জ্বলছে। কিন্তু এই পরিস্থিতি ঠিক করার পরিবর্তে দুই দলের নেতারাই একে অপরের দিকে কাদা ছোড়াছুড়িতে ব্যস্ত। তাঁরা ব্যস্ত অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ করতে।’ তবে নীতীশ কুমারের সমর্থকরাও সম্মত হয়েছেন যে, বিক্ষোভ দমনে কোনও পদক্ষেপ না করায় তাঁর ভাবমূর্তিরই ক্ষতি হয়েছে।