লখনউ: তাজমহলের মূল ভবনের ২২টি তালাবন্ধ ঘরের দরজা খোলার দাবিতে করা আবেদন খারিজ করে দিল এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চ। আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে কোনও ঐতিহাসিক গবেষণার জন্য নির্দিষ্ট মেথডোলজিবা প্রণালী রয়েছে। এই বিষয়গুলি ঐতিহাসিক বা শিক্ষাবিদদের গবেষণার বিষয় এবং বিতর্কের বিষয়। আদালতের হাতে এই বিষয়ে কোনও ন্যায়সঙ্গত ব্যবস্থা নেই। তাই এই বিষয়ে আদালত কোনও নির্দেশ দিতে পারে না। শুধু তাই নয়, আবেদনকারীও কোনও গবেষণা ছাড়াই এই আবেদন করেছেন এবং জনস্বার্থ মামলার মতো গুরুতর বিষয়কে নিয়ে উপহাস করেছেন, এমনটাই জানিয়েছে আদালত। এমনকী আবেদনকারীকে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গত সপ্তাহেই, তাজ-মহলের মূল ভবনের বন্ধ থাকা ২২টি কক্ষের দরজা খোলার বিষয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন জনৈক রজনীশ সিং। তাঁর দাবি তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির অযোধ্যার মিডিয়া সেলের দায়িত্বে আছেন। আদালতে পেশ করা আবেদনে তিনি বলেছিলেন, বেশ কয়েকটি হিন্দু গোষ্ঠীর দাবি তাজমহল আসলে একটি শিব মন্দির। আগে এই স্থাপত্য পরিচিত ছিল ‘তেজো মহালয়’ হিসাবে। অনেক ঐতিহাসিকও এই মতের বিশ্বাসী। এই নিয়ে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। তাই এই বিতর্কের দ্রুত অবসান হওয়া দরকার। এই কারণেই ওই বন্ধ ঘরগুলিতে কোনও হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি বা লিপি রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করা উচিত। এই বিষয়েই তিনি আদালতের নির্দেশ চেয়েছিলেন।
তবে, এদিন এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চ সাফ জানিয়েছে, এই আবেদনপত্রের কোনও সারবত্তাই নেই। বিচারপতি ডিকে উপাধ্যায় রজনীশ সিং-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, আদালতে আসার আগে আবেদনকারীর সঠিক গবেষণা করে আসা উচিত ছিল। তিনি আরও বলেন, ‘আগামিকাল আপনি আমাদের চেম্বারে কি আছে দেখতে চাইবন, তা তো হতে পারে না’। এর জন্য তাঁর কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিচারপতি বলেন, ‘আগে পড়াশোনা করে দেখুন কে তাজমহল তৈরি করেছিলেন, কবে তাজমহল তৈরি হয়েছিল। তার আগে জনস্বার্থ মামলা নিয়ে উপহাস করবেন না’।
আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টি। টুইট করে তারা বলেছে, ঐতিহাসিক তাজমহল হল প্রেমের সৌধ। সারা বিশ্বে ভারতের বিশেষ পরিচয় তৈরি করে দিয়েছে স্থাপত্য। তারা আরও দাবি করেছে, দেশের মৌলিক সমস্যা থেকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতেই সরকারের পক্ষ থেকে এই ধরনের নন-ইস্যুকে সমস্যা হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।