শাহের নয়া অস্ত্র ‘গুপকার গ্যাং’ আসলে কী? জোট থেকেই বা কেন বেরিয়ে এল কংগ্রেস?

ঋদ্ধীশ দত্ত |

Dec 06, 2020 | 3:03 PM

অমিত শাহের প্রশ্ন, কংগ্রেস কি 'গুপকার গ্যাং' (Gupkar Gang)-এ নাম লিখিয়েছে? কী এই 'গুপকার গ্যাং'? 'টুকরে টুকরে গ্যাংয়ের' মতোই কিছু? কেনই বা এর থেকে বেরিয়ে এসে কংগ্রেস গা বাঁচাতে চাইছে?

শাহের নয়া অস্ত্র গুপকার গ্যাং আসলে কী? জোট থেকেই বা কেন বেরিয়ে এল কংগ্রেস?
অলঙ্করণ- অভীক দেবনাথ

Follow Us

TV9 বাংলা ডিজিটাল: কংগ্রেস কি ‘গুপকার গ্যাং’ (Gupkar Gang)-এ নাম লিখিয়েছে? কী তাদের অবস্থান? সম্প্রতি রাহুল (Rahul Gandhi) ও সোনিয়া গান্ধীর (Sonia Gandhi) উদ্দেশে এমনই কটাক্ষ-মিশ্রিত প্রশ্ন করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। টুইটে এই প্রশ্ন করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, তারা এই ‘গুপকার জোট’-এর সদস্য নয়। প্রশ্ন হল- কী এই ‘গুপকার গ্যাং’? ‘টুকরে টুকরে গ্যাংয়ের’ মতোই কিছু? কেনই বা এর থেকে বেরিয়ে এসে কংগ্রেস গা বাঁচাতে চাইছে?

‘গুপকার জোট’-এর উৎপত্তি

উপত্যকা থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ হটানোর একদিন আগে অর্থাৎ ৪ অগস্ট ২০১৯-এ ন্যাশনাল কনফারেন্স (NC), পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (PDP), ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস (INC), কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (CPI), জম্মু কাশ্মীর পিপলস কনফারেন্স, আওয়ামী ন্যাশনাল কনফারেন্স মিলে জোট বেঁধে ‘পিপলস অ্যালায়েন্স ফর গুপকার ডিক্লেরেশন’ (PAGD) গঠন করে। ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লাহর (Farooq Abdullah) গুপকার রোডের বাসভবনে বৈঠকের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে একে ‘গুপকার ঘোষণাপত্র’ নাম দেওয়া হয়। ‘গুপকার ঘোষণাপত্র’-এ স্বাক্ষর করা দলগুলিকেই ‘গুপকার গ্যাং’ বলে কটাক্ষ করেছেন অমিত শাহ।

জোটের প্রাথমিক উদ্দেশ্য

প্রাথমিকভাবে এই জোট গঠিত হয়েছিল জম্মু কাশ্মীরে কেন্দ্রীয় সরকারের সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে ক্রমশ এই রাজনৈতিক শক্তিগুলির জোট পৃথক এবং বৃহৎ রাজনৈতিক দলের আকার দেয়। যাদের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে অনুচ্ছেদ ৩৭০ এবং ৩৫এ ফিরিয়ে আনা।

‘গুপকার জোট’-এর বর্তমান অবস্থান

২৮ নভেম্বর জম্মু কাশ্মীরে জেলা উন্নয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বছর কেন্দ্রীয় সরকার ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করার এই প্রথম নির্বাচন হচ্ছে সেখানে। তা নিয়ে সব দলই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। ফলে রাজনৈতিক দলগুলির মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিতে পারে এমন আশঙ্কা জন্ম নিয়েছে। আর জম্মু কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ এই দলগুলির ‘মনোবাঞ্ছা’ বুঝতে পেরেই পাল্টা ফোঁস করেছেন অমিত শাহ।

আরও পড়ুন: এই ৯ মুখ একুশের নির্বাচনের হিসেব বদলে দিতে পারে

কেন বেরিয়ে এল কংগ্রেস?

গতবছর ‘গুপকার ঘোষণাপত্র’ ঘোষণা হওয়ার সময় এই জোটে কংগ্রেসের নাম থাকলেও এদিন সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে কংগ্রেস। দলীয় মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘কংগ্রেস আর গুপকার জোট বা PAGD-র সদস্য নয়।’ আসলে ‘গুপকার জোট’-এর সদস্যরা সাম্প্রতিক সময়ে যে ধরনের মন্তব্য করেছেন তা বেকায়দায় ফেলেছে কংগ্রেসকে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ পুনরুদ্ধারের জন্য ফারুক আব্দুল্লাহকে বলতে শোনা গিয়েছিল চিন ও পাকিস্তানের সাহায্য নেওয়ার কথা। মেহবুবা মুফতি আবার বলেছেন, পূর্ববর্তী জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের পতাকা থাকলে তবেই জাতীয় পতাকার কোনও মূল্য রয়েছে তাঁর কাছে। সব মিলিয়ে ‘গুপকার’ সদস্যদের মন্তব্য এমন পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে যেখানে জোটে থাকা মানে দেশের একতা ও সার্বভৌমত্বের বিরোধিতা করা। ফলে কংগ্রেস যে সেই জোটে থাকতে চাইবে না সেটাই স্বাভাবিক। এবং বাস্তবেও তাই হয়েছে।

আরও পড়ুন: লাভ হল না ক্ষতি! তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গিয়ে কোন নেতা আজ কোথায় দাঁড়িয়ে?

তাৎপর্যপূর্ণভাবে, জম্মু কাশ্মীরে একাধিক রাজনৈতিক দল যারা এতদিন একে অপরের বিরোধিতা করে এসেছে, তারা সকলেই এবার এক ছাতার তলায় আসতে বাধ্য হয়েছে। ইতিপূর্বে অমিত শাহের মুখে ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’ শোনা গেলেও ‘গুপকার গ্যাং’ কথাটির ব্যবহার এই প্রথমবার করেছেন তিনি। ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’-এর আদৌ কোনও অস্তিত্ব আছে কিনা তা নিয়ে খোদ কেন্দ্রীয় সরকারের সংশয় থাকলেও ‘গুপকার গ্যাং-এর উপস্থিতির বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে কড়া অবস্থান নেবেন, তা মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।

Next Article