গুয়াহাটি: কোভিড-১৯ মহামারির জন্য পিছিয়ে গিয়েছে ভারতের আদমশুমারির কাজ। সোমবার অসমের কামরূপ জেলায় এক আদমশুমারি কার্যালয়ের উদ্বোধনে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন (Amit Shah on e-census), পরবর্তী আদমশুমারি হবে ই-শুমারি, অর্থাৎ ইলেকট্রনিক আদমশুমারি। তিনি আরও বলেন, ই শুমারি হবে ১০০ শতাংশ নিখুঁত। কারণ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই আদমশুমারি পদ্ধতিটি আরও বৈজ্ঞানিক করে তুলতে অত্যাধুনিক কৌশল যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁর দাবি, দেশের আগামী ২৫ বছরের নীতি তৈরিতে ই-শুমারি বড় ভূমিকা নেবে। কী এই ই-শুমারি, কীভাবে এটি ভারতের এতদিনের জনগণনার পদ্ধতি পাল্টে দিচ্ছে – আসুন দেখে নেওয়া যাক।
কীভাবে কাজ করবে ই-শুমারি?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ই-শুমারি হতে চলেছে অনেক বেশি বৈজ্ঞানিক। জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধন যুক্ত করা হবে আদমশুমারির সঙ্গে। জন্মের পরই বিশদ বিবরণ আদমশুমারী রেজিস্টারে যুক্ত করা হবে। ওই ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর হওয়ার পর, তার নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তার মৃত্যুর পর, সেই নাম মুছেও ফেলা হবে। নাম-ঠিকানা পরিবর্তনের প্রক্রিয়াও হবে আরও মসৃণ। ২০২৪ সালের মধ্যে, প্রতিটি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধিত হবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এই সকল তথ্য আপডেট হয়ে যাবে।
সরাসরি পোর্টালে তথ্য
শুধু তাইই নয়, যাতে নাগরিকরা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নিজেরাই নিজেদের তথ্য ই-শুমারিতে যুক্ত করতে পারেন, তার জন্য একটি বিশেষ সফটওয়্যারও তৈরি করছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর পাশাপাশি আদমশুমারির তথ্য সংগ্রহের জন্য বাড়ি বাড়িও যাবেন আদমশুমারির কর্মীরা। তাদের হাতে থাকবে ট্যাবলেট বা স্মার্টফোন। সেই যন্ত্রের মাধ্যমে তারা সরাসরি একটি পোর্টালে সংগৃহীত তথ্য ভরে দেবেন।
আদমশুমারির নিয়ম বদল
ই-শুমারি চালু করার জন্য গত মাসেই আদমশুমারির বিধিতে বেশ কিছু সংশোধনী এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ১৯৯০ সালের আদমশুমারি আইন বদলে, ইলেকট্রনিক ফর্ম এবং স্ব-গণনা পদ্ধতিকে এর আওতায় আনা হয়েছে।
Assam | The census has an important role in policymaking. Only census can tell what is the status of development, SC & ST, and what kind of lifestyle people have in mountains, cities & villages: Union Home Minister Amit Shah at the inauguration of the census office in Amingaon pic.twitter.com/Cau5WS3opl
— ANI (@ANI) May 9, 2022
কবে হবে আদমশুমারি?
২০২০ সালের মার্চেই জনগণনার কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির কারণে পুরো প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গিয়েছিল। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে অমিত শাহ প্রথম অনলাইন জনগণনার কথা উল্লেখ করেছিলেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আদমশুমারির জন্য ৩,৭৮৬ কোটি টাকার বাজেটও বরাদ্দ করেছিলেন। তবে, সেই আদমশুমারির কাজ কবে শুরু হবে, সেই সম্পর্কে এখনও কোনও স্পষ্টতা নেই। তবে, রাজ্য সরকারগুলিকে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত জেলাগুলির সীমান্ত এবং অন্যান্য সিভিল এবং পুলিশ ইউনিটগুলির পরিবর্তন না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা থেকে মনে করা হচ্ছে পরের তিন মাসের মধ্যেই শুরু হতে পারে জনগণনার কাজ।
কীভাবে দেশের নীতি নির্ধারণে ভূমিকা নিতে পারে জনগণনা?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘শুধুমাত্র আদমশুমারিই বলতে পারে উন্নয়নের অবস্থাটা ঠিক কী, এসসি ও এসটি, এবং পাহাড়, শহর ও গ্রামে মানুষের জীবনযাত্রা কেমন।’ বস্তুত, আদমশুমারি থেকে জনসংখ্যার পাশপাশি, অর্থনৈতিক কাজকর্ম, সাক্ষরতা, শিক্ষা, আবাসন, পারিবারিক সুযোগ-সুবিধা, নগরায়ন, মাটির উর্বরতা, মৃত্যুর হার, তফসিলি জাতি এবং উপজাতি সংক্রান্ত তথ্য, ভাষা, ধর্ম, পরিযায়ী শ্রমিক, প্রতিবন্ধী-সহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং জনসংখ্যা সংক্রান্ত বিস্তারিত এবং প্রামাণিক তথ্য পাওয়া যায়। ই-শুমারির ফলে এই তথ্যগুলি যদি সরকারের দাবি মতো ১০০ শতাংশ সঠিক হয়, সেই ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণের কাজ আরও সহজ হবে।