গুয়াহাটি: বাল্যবিবাহ নিয়ে ক্ষোভ অব্যাহত অসমে। ক্ষোভের বিষয়টি নজর এড়ায়নি হাইকোর্টেরও। গুয়াহাটি হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত মামলাও উঠেছে। সেই মামলার শুনানিতেই আদালত জানিয়েছে, সরকারের এই পদক্ষেপ মানুষের জীবনকে সমস্যায় ফেলে দিচ্ছে। এমনকি বাল্যবিহারের মামলায় পকসো ধারার উপযোগিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আদালত। বাল্যবিবাহ অসমের এক বড় সমস্যা। সম্প্রতি হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বাল্যবিবাহে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। সেই তালিকা তৈরি করে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে ৩ হাজারেরও বেশি ব্যক্তিকে। এদের সকলের বিরুদ্ধেই নাবালিকাকে বিয়ে করার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এই গ্রেফতারির জেরে ব্যাপক সমস্যায় পড়েছে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলি। এ নিয়ে মহিলারা বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরা পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। এই গ্রেফতারির জেরে এখন আতান্তরে পড়েছেন তাঁদের পরিবারের লোকেরা।
বাল্যবিবাহের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস অ্যাক্ট বা পকসো আইনে। কিন্তু এই সমস্ত বিষয়য়ে এই আইনে মামলা করা কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। এই আইনে সাজা অনেকটাই কঠোর। সাধারণত শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনায় এই ধারায় মামলা দায়ের হয়। কিন্তু এখানে বাল্যবিবাহের বিষয়গুলিতে যৌন নির্যাতনের অভিযোহ রয়েছে কি না সে ব্যাপারেও জানতে চেয়েছে আদালত। এমনকি ধৃতদের হেফাজতে রেখে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আদালত। এমনকি এই বিষয়ে ৯ জনকে গ্রেফতারের আগেই জামিন দিয়েছে আদালত।
বিষয়টি নিয়ে গুয়াহাটি হাইকোর্টে বলেছে, “এ ক্ষেত্রে কেন পকসো ধারায় মামলা? পকসো আইন যুক্ত করা হয়েছে, মানেই এই নয়, যে আদালত বিষয়টির উপর নজর রাখছে না। আমরা কাউকে মুক্তি দিচ্ছি না। আপনাদের তদন্ত করতেও কেউ বাধা দিচ্ছে না। কিন্তু এখানে কি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে?” গোটা বিষয় খতিয়ে দেখে আদালত বলেছে, “এই মুহূর্তে আদালতের মনে হচ্ছে, অভিযুক্তদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। যদি আপনারা কারও দোষ খুঁজে পান, তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট দায়ের করুন।” এর পরই আদালতের নজরে এসেছে বিষয়টি নিয়ে জনগণের সমস্যার বিষয়টি। এ ব্যাপারে আদালত বলেছে, “এই ঘটনা সাধারণ মানুশের জীবনে ব্যাপক সমস্যা তৈরি করেছে। ধৃতদের পরিবারে সন্তান, বয়স্ক লোকেরা রয়েছে। বাল্যবিবাহ খুবই খারাপ। কিন্তু এখন এই ভাল-খারাপ নিয়ে বিচারের সময় নয়। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে জেলবন্দি করে রাখা উচিত কি না, তা নিয়েই এখন আলোচনা হওয়া উচিত।”