ভোপাল: ঘরে অসুস্থ মেয়ে। পাঁচ বছর ধরে শয্যাশায়ী সে। মেয়ের চিকিৎসায় ঘর-বাড়ি, দোকান সব বেচে দিয়েছেন বাবা প্রমোদ গুপ্ত। টাকার বিনিময়ে নিজের শরীরের রক্তটুকুও দিয়েছেন। এতটুকু হাত-পা কাঁপেনি হতভাগ্য বাবার। ঘটি-বাটি সবই গিয়েছে মেয়ের চিকিৎসায়। এই অবস্থায় কামড় বসিয়েছে চরম আর্থিক দুর্দশা। এই পরিস্থিতিতে মেয়ের চিকিৎসা করতে পারবেন না? এই চিন্তায় এবার নিজের প্রাণটাই কেড়ে নিলেন তিনি। মধ্য প্রদেশের (Madhya Pradesh) সাতনার (Satna) ঘটনা।
মধ্য প্রদেশের সাতনার বাসিন্দা প্রমোদ গুপ্ত। স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে সুখে শান্তিতেই বসবাস করছিলেন। নিজের বাড়ি ছিল। দোকানও ছিল। তবে পাঁচ বছর আগের একটি দুর্ঘটনা সবটা তছনছ করে দিয়েছে। পাঁচ বছর আগে মেয়ে অনুষ্কা গুপ্ত একটা দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। সুষুম্নাকাণ্ডে আঘাত লাগে। তখন থেকেই শয্যাশায়ী সে। অনেক চিকিৎসাতেও এখনও সোজা হয়ে বসতে পারেনি সে। জলের মতো শুধুই টাকা-পয়সাই বেরিয়ে গিয়েছে এই পাঁচ বছরে। বাড়ি-ব্যবসা বিক্রি করে দিয়েছিলেন প্রমোদ। নিজের শরীরের রক্ত বিক্রিও শুরু করেছিলেন। সংসারের জন্য গ্যাস সিলিন্ডার ও খাবার আনার জন্যই মূলত রক্ত বিক্রি করেছিলেন তিনি। রক্ত বিক্রি করতে করতে শরীর ভাঙতে শুরু করে প্রমোদের। মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। শারীরিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েন।
১৭ বছর বয়সী অনুষ্কা বলছে, রক্ত বিক্রি করে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। রোজগার একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে খুব উজ্জ্বল মেধার মেয়ে অনুষ্কা। এক লেখকের সাহায্যে সে বোর্ডের পরীক্ষায়ও বসেন। এমনকী সাফল্যের সঙ্গে বোর্ড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এদিক থেকে সাফল্য পেলেও আর্থিক দুর্দশায় তখন ডুবে তাঁর পরিবার। কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি বলেও জানিয়েছে অনুষ্কা। সংসারের খরচ জোগাড় করতে না পেরে হতাশা গ্রাস করতে থাকে প্রমোদকে। এর মধ্যেই একদিন দোকানে যাওয়ার নাম করে ভোর ৪ টেয় বাড়ি ছেড়ে যান প্রমোদ। ঘণ্টাখানেক পরও তিনি বাড়ি না ফেরায় চিন্তা শুরু করেন পরিবারের লোকেরা। তারপর খুঁজে পেতে ব্যর্থ হওয়ায় পুলিশে অভিযোগ জানায় পরিবার। তারপর গত মঙ্গলবার সাতনায় রেল লাইনে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। অনুষ্কা বলছে, “আমাদের খরচ চালাতে বাবা রক্তও বিক্রি করেছিলেন। তারপর আর খরচ না জোগাতে পেরে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। আর তাই আত্মহত্যা করলেন।” সাতনার ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ খ্যাতি মিশ্র জানিয়েছেন, এই ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে এবং তদন্ত জারি রয়েছে।