নয়া দিল্লি: ধোপে টেকেনি বিরোধীদের আপত্তি। ১০ ঘণ্টা ধরে আলোচনার পর রাত ২টোয় লোকসভায় পাশ হয়ে গেল ওয়াকফ সংশোধনী বিল। আজ, বৃহস্পতিবার রাজ্যসভাতেও পেশ করা হয়েছে এই বিল। যদি সংসদের দুই কক্ষেই বিনা বাধায় এই বিল পাশ হয়ে যায়, তবে আইন সংশোধনে আর বাধা থাকবে না। ওয়াকফের সম্পত্তি কত, কোথায় কোথায় সেই সম্পত্তি ছড়িয়ে, এই চর্চা যখন চলছে দেশজুড়ে, সেই সময়ই জানা গেল বাংলায় ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে এক বিস্ফোরক তথ্য। ইডেন গার্ডেন্স থেকে ফোর্ট উইলিয়াম, মহাকরণ, এমনকী আলিপুর চিড়িয়াখানার অর্ধেক অংশও নাকি ওয়াকফের সম্পত্তি!
শুনতে অবিশ্বাস্য় মনে হলেও, এটাই দাবি। গোটা দেশেই ছড়িয়ে রয়েছে ওয়াকফ সম্পত্তি। পশ্চিমবঙ্গেও বিপুল সম্পত্তি রয়েছে। ওয়াকফের একাংশের দাবি, কলকাতা বিমানবন্দরের একাংশ, রাজভবন, ইডেন গার্ডেন্স, ফোর্ট উইলিয়াম, মহাকরণ, আলিপুর চিড়িয়াখানার অর্ধেক অংশ আসলে ওয়াকফ সম্পত্তি। তালিকায় নাকি রয়েছে মোহনবাগান ক্লাব, ইস্ট বেঙ্গল ও মহামেডান ক্লাবের জমিও! তবে এই দাবির সমর্থনে বিশেষ কোনও প্রমাণ নেই।
বিজেপি মুখপাত্র কেয়া ঘোষও এই বিতর্কে অংশ নিয়ে বলেন যে তৃণমূলের এক বিধায়ক তথা ধর্মীয় নেতা দাবি করেছিলেন ইডেন গার্ডেন্স,রাজভবন গোটা দক্ষিণ কলকাতাই নাকি ওয়াকফ সম্পত্তি। অথচ কোনও প্রমাণ নেই এই দাবির।
সম্প্রতিই রাজ্যের ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে রাজ্যসভায় প্রশ্ন করেছিলেন বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। রাজ্য়ের ওয়াকফ সম্পত্তিগুলির মধ্য়ে কতগুলি ওয়াকফ সম্পত্তিকে শিক্ষা বা স্বাস্থ্যের কাজে লাগানো হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়নমন্ত্রী কিরণ রিজিজু জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে মোট ওয়াকফ সম্পত্তির সংখ্যা ৮০,৫৪৮। বর্তমানে ৩৮০টি ওয়াকফ সম্পত্তি দখলে রয়েছে। সেগুলির জন্য ভাড়াও নেয় ওয়াকফ বোর্ড।
কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী কলকাতার দুই অভিজাত ক্লাব, রয়্যাল ক্যালকাটা গলফ ক্লাব ও টলিগঞ্জ ক্লাবও ওয়াকফ সম্পত্তির উপরে অবস্থিত! এগুলির জন্য ভাড়া দিতে হয়। দুই ক্লাবকেই বছরে ১৮ লক্ষ ৮৮ হাজার ২২৪ টাকা দিতে হয়।
কোন কোন ওয়াকফ সম্পত্তি সাধারণ মানুষের কাজে লাগানো হয়েছে, সেই হিসেবও দিয়েছিলেন কিরণ রিজিজু। জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গে ৪টি ওয়াকফ সম্পত্তির উপর তৈরি হয়েছে মডেল ইংলিশ মিডিয়াম মাদ্রাসা। ১৯টি সম্পত্তিতে রয়েছে মুসলিম পুরুষ ও মহিলাদের জন্য হস্টেল, ৯টি সম্পত্তিতে গড়ে উঠেছে হাসপাতাল ও ডিসপেনসারি, ১৫৮টি সম্পত্তিতে রয়েছে স্কুল। এছাড়া বীরভূমের পাথরচাপড়িতে একটি ওয়াকফ সম্পত্তি উপর তৈরি হয়েছে শপিং কমপ্লেক্স।
প্রসঙ্গত, এতদিন ওয়াকফ বোর্ড চাইলেই কোনও সম্পত্তিকে ওয়াকফের সম্পত্তি বলে দাবি করতে পারত। তাদের কোনও আইনি প্রমাণ দেখাতে হত না। ওয়াকফ বোর্ডের বিরুদ্ধে সরাসরি আদালতেও যাওয়া যায় না। প্রথমে ওয়াকফ ট্রাইবুনালে আর্জি জানাতে হয়। ট্রাইবুনাল সিদ্ধান্ত নেয়, জমি ওয়াকফের কি না। সংশোধিত বিলে এই নিয়ম সম্পূর্ণ অবলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে। ওয়াকফ বোর্ড চাইলেই আর কোনও জমি বা সম্পত্তিতে দাবি জানাতে পারবে না।