পাটনা: লালন ফকির লিখেছিলেন বটে, ‘চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে’। তাই বলে, মাত্র ৪০ দিন বয়সী কোনও শিশুর পেটে কি সত্যিই জন্ম নিতে পারে আরেকটি শিশু? অত্যন্ত অদ্ভুত হলেও, ঠিক এমনটাই ঘটেছে বিহারের মতিহারি জেলায়। সম্প্রতি, জেলার রহমানিয়া মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা, ৪০ দিন বয়সী এক শিশুর পেটে ডাক্তাররা একটি ভ্রূণ পেয়েছেন। পরে সেটি অপারেশন করে বের করা হয়েছে। কিন্তু কীভাবে ঘটল এই অত্যাশ্চর্য ঘটনা? আসুন জেনে নেওয়া যাক।
মাত্র ৪০ দিন আগে জন্ম নিয়েছিল শিশুটি। বাড়িতে সেই নিয়ে খুশির সীমা ছিল না। তবে, অতি সম্প্রতি তাকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন তার বাবা-মা ও পরিবারের বাকি সদস্যরা। আচমকা শিশুটির প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছিল পেটে ব্যথা। তার পেলভিস, অর্থাৎ, তলপেটের কাছের এক অংশ বেশ ফুলে গিয়েছিল। সময় নষ্ট না করে শিশুটিকে রহমানিয়া মেডিকেল সেন্টারে এনেছিলেন তার বাবা-মা।
প্রাথমিক চিকিৎসার পর, ডাক্তাররা বুঝেছিলেন, পেট ফুলে থাকার কারণেই শিশুটির প্রস্রাবের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু পেট ফোলার কারণ ধরা যাচ্ছিল না। এরপর এই রহস্যের সমাধানে এক গুচ্ছ পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছিল। তারা আর তাতেই এই আশ্চর্যজনক তথ্য বের হয়। পরীক্ষার ফল সামনে আসার পর শুধু শিশুটির পরিবারের সদস্যরাই নন, হাসপাতালের সকলেও হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। দেখা গিয়েছিল, ৪০ দিনের শিশুটির পেটে বেড়ে উঠছে আরেকটি শিশু। তবে, ডাক্তাররা জানিয়েছেন, ওই নবজাতক যখন মায়ের গর্ভে ছিল, তখনই তার পেটে ওই ভ্রূণটি তৈরি হয়েছিল।
এই বিষয়ে রহমানিয়া মেডিক্যাল সেন্টারের ডাক্তার ওমর তাবরেজ বলেছেন, ‘ডাক্তারি পরিভাষায় এই অবস্থাকে বলে ‘ফেটাস ইন ফেটু’ বা শিশুর পেটে ভ্রূণের উপস্থিতি’। তিনি আরও জানিয়েছেন, এই অবস্থা অত্যন্ত বিরল ঘটনা। ১০ লক্ষ শিশুর মধ্যে ৫ জনের ক্ষেত্রে ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
জানা গিয়েছে, শিশুটির পেট ফোলার কারণ জানার পরই তার অবস্থার অবনতি হয়েছিল। তাকে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য অন্য এক বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেই হাসপাতালে শিশুটির তৎক্ষণাৎ অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিশুটির অপারেশন সফল হয়েছে। অপারেশনের পর শিশুটির পেট থেকে ভ্রূণটি বের করে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতির অদ্ভূত খেয়ালের সাক্ষী হওয়া শিশুটি আপাতত পুরোপুরি সুস্থ আছে। তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে।