নয়া দিল্লি: বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। কেন্দ্র থেকে বিজেপি-কে হঠাতে মরিয়া বিরোধী দলগুলি। কোনও একটি দল কেন্দ্র থেকে তাদের ভিটেছাড়া করতে পারবে না বলেই বিশ্বাস বিজেপি বিরোধী দলগুলির। এর জন্য প্রয়োজন মহাজোট। আর সেই জোট বাঁধতেই বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্য়মন্ত্রী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে বৈঠক করছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার। আর রাজধানীতে বিজেপি বিরোধী অন্যতম মুখ হলেন আপ নেতা তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। এবার কেজরীবালের সঙ্গে বৈঠক করলেন নীতীশ। সঙ্গে ছিলেন আরজেডি নেতা তথা বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব, জেডিইউ নেতা লালন সিং, সঞ্জয় ঝা ও মনোজ ঝা।
আজ সাড়ে ১১ টা নাগাদ কেজরীবাল-নীতীশের মধ্যে বৈঠক হয়। এই বৈঠক শেষেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কেজরীবাল বলেন, “আজ নীতীশজির সঙ্গে বৈঠকে তিনি জানান, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ বাতিল করে দিল্লির পক্ষে অধ্যাদেশ আনার ইস্যুতে তিনি দিল্লির জনগণের পাশে রয়েছেন। কেন্দ্র যদি এই অধ্যাদেশকে বিল হিসাবে নিয়ে আসে, তাহলে সমস্ত অ-বিজেপি দল একত্রিত হলে রাজ্যসভায় তা রুখে দিতে পারে” কেজরীবাল আরও বলেছেন, যদি এমন ঘটনা ঘটে, তাহলে এমন বার্তা যেতে পারে যে ২০২৪ সালে বিজেপি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব। এদিকে বৈঠক শেষে নীতীশ বলেন, “কোনও নির্বাচিত সরকারকে প্রদত্ত ক্ষমতা কীভাবে কেড়ে নেওয়া যেতে পারে? এটি সংবিধানের বিরুদ্ধে। আমরা অরবিন্দ কেজরীবালের পাশে আছি। আমরা দেশের সব বিরোধী দলকে একজোট করার চেষ্টা করছি।” উল্লেখ্য, গত বছরেই বিজেপির সঙ্গে জোট ভেঙে কংগ্রেস, আরজেডির সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিহারে সরকার গঠন করেছিলেন নীতীশ কুমার। আর সেই সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন তিনি। তারপর থেকে বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বারবার আক্রমণ শানান তিনি। আর তখন থেকেই ২৪-র লক্ষ্যে বিরোধী জোট তৈরিতে মন দেন তিনি। তবে এই প্রথম নয় বিজেপির সঙ্গে জোট বদলের ইতিহাস নীতীশের জীবনে আগেও ছিল। এবার ২৪-র নির্বাচনে পুরনো জোটসঙ্গী বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে কোমর বেঁধেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই দিল্লির প্রশাসনিক ক্ষমতা নিয়ে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র কর্তৃক নিয়োজিত লেফটেন্যান্ট গভর্নরের মধ্যে বিবাদ চলছে। সম্প্রতি সেই বিবাদে ইতি টেনে কেজরীবালের পক্ষে রায় দেশের শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ জানায়, দিল্লির যাবতীয় প্রশাসনিক ক্ষমতা নির্বাচিত সরকারের হাতেই থাকবে। তবে পুলিশ, আইন-শৃঙ্খলা ও জমি সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আর দিল্লি সরকারের যে কোনও সিদ্ধান্ত লেফটেন্যান্ট গভর্নর মানতে বাধ্য বলে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তবে সুপ্রিম রায়েও কেজরীবাল বনাম লেফটেন্যান্ট গভর্নরের মধ্যে দীর্ঘ ক্ষমতার লড়াই ধামাচাপা পড়েনি। শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশের ফলে দিল্লিতে আমলা নিয়োগ ও তাঁদের বদলি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নির্বাচিত রাজ্য সরকারের হাতেই সপে দেওয়া হয়। আর এই নির্দেশের পরই দিল্লির আপ সরকার এক আমলাকে বদলির নোটিস পাঠায়। তারপর গত শুক্রবার কেন্দ্রের তরফে একটি অর্ডিন্যান্স আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই আইন অনুযায়ী, কেন্দ্রের প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট গভর্নরই আমলাদের নিয়োগ বা বদলির ক্ষেত্রে শেষ কথা বলবেন। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে এই অর্ডিন্যান্সকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করার কথা জানান কেজরীবাল। পাশপাশি তিনি বলেন, কেন্দ্রের এই ন্যাশনাল ক্যাপিটাল সিভিল সার্ভিস অথরিটি অর্ডিন্যান্স নিয়ে বিরোধী দলগুলির শরণাপন্ন হবেন তিনি। এর মধ্যেই রবিবাসরীয় বৈঠকে কেজরীবাল ও নীতীশ কুমার।
এদিকে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী ঐক্য তৈরিতে জোর দিয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। কেন্দ্র থেকে বিজেপিকে হঠাতে বিরোধী জোট তৈরি করতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত, সেকথাও জানিয়েছিলেন। এই পরিস্থিতিতে একাধিক রাজ্যে গিয়ে বিজেপি বিরোধী দলনেতার সঙ্গে বৈঠক করেন নীতীশ। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অখিলেশের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি। এবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবালের সঙ্গে দেখা করে তাঁর পাশে থাকার বার্তা দিলেন নীতীশ।