পটনা: ‘সুশাসন বাবু’ নাম তাঁর, বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে রয়েছেন তিনি। সম্প্রতিই এনডিএ-র জোট থেকে বেরিয়ে এসে আরজেডি-কংগ্রেস সহ ১১টি দল নিয়ে মহাগঠবন্ধনের সরকার গঠন করেছেন জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার। বুধবার ছিল বিধানসভায় আস্থাভোট। সেখানে বিধা বাধাতেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করেছে নতুন জোট সরকার। পাকাপাকিভাবে সরকারের দায়িত্ব পাওয়ার পরই এবার বিজেপির বিরুদ্ধে মুখ খুললেন বিহারের অষ্টমবারের জন্য হওয়া মুখ্যমন্ত্রী। ২০২০ সালে বিজেপির সঙ্গে জোটেও তিনিই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু সেই সময় নাকি তিনি মুখ্যমন্ত্রী হতেই চান নি। বিজেপি ক্রমাগত চাপ দেওয়াতেই তিনি মুখ্যমন্ত্রী হন।
বুধবার বিধানসভা থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নীতীশ কুমার বলেন, “২০২০ সালের নির্বাচনের পর আমি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। যেহেতু বিজেপির কাছে বিধায়করের সংখ্যা বেশি ছিল, তাই তাদের দলেরই কেউ মুখ্যমন্ত্রী হবেন ভেবেছিলাম। কিন্তু আমার উপর চাপ সৃষ্টি করা হয় মুখ্যমন্ত্রী পদে বহাল থাকার জন্য। চাপের মুখে পড়েই আমি রাজি হই।”
তিনি জানান, বিজেপির তরফেও বেশ কয়েকজন নেতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে সামিল ছিলেন, এদের মধ্যে অন্যতম হলেন সুশীল কুমার মোদী ও প্রেম কুমার। তিনি বলেন, “আমায় বলা হয়েছিল নন্দ কিশোর যাদবকে স্পিকার বানানো হবে। আমিও বলেছিলাম যে ও পুরনো বন্ধু, এটা খুব ভাল হবে। কিন্তু শেষ অবধি তাঁকে আর দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।”
২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের সূত্র ধরে তিনি বিজেপিকে কটাক্ষ করে আরও বলেন, “২০২০-র নির্বাচনে আমার বিরুদ্ধে কাকে দাঁড় করিয়েছিলেন? কিন্তু সবকিছু হওয়ার পরও আমি কোনও রাগ বা ক্ষোভ পুষে রাখিনি এবং বলেছিলাম যে আমি মুখ্য়মন্ত্রী হতে চাই না। আমি বলেছিলাম, আপনাদের কাছে আসন সংখ্যা বেশি রয়েছে, আপনাদের দলের কেউই মুখ্যমন্ত্রী হোক। কিন্তু আমায় জোর করে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়, তারপর কী হয়েছে সকলেই জানেন…যাকে আমি মাটি থেকে তুলে শীর্ষ পদে নিয়ে এসেছিলাম, তাকে কেন্দ্রে পাঠালাম এবং সে আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করল।”
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে একক দল হিসাবে সর্বোচ্চ ভোট পায় আরজেডি। দ্বিতীয় স্থানে ছিল বিজেপি এবং তৃতীয় স্থানে জেডিইউ। নির্বাচনে এই শোচনীয় ফলের পিছনে তলেতলে বিজেপিরই হাত ছিল, এই সন্দেহ আগেই করেছিলেন নীতীশ কুমার। প্রাক্তন জোটসঙ্গী চিরাগ পাসওয়ানকেও বিজেপি ব্যবহার করেছিল বলে অভিযোগ ছিল তাঁর। অন্যদিকে, সম্প্রতিই জেডিইউয়ের আরসিপি সিং কেন্দ্রে মন্ত্রীপদ পাওয়ার পরই শীর্ষ নেতৃত্বের সন্দেহ হয় তিনি বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে নীতীশের সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন। মহারাষ্ট্রের পুনরাবৃত্তি হতে পারে বিহারে, এই আশঙ্কাতেই আগেভাগে এনডিএ জোট ছেড়ে বেরিয়ে এসে নতুন গঠবন্ধনের সরকার গঠন করেন নীতীশ কুমার।