পটনা: দুটো কিডনিই চুরি হয়ে গিয়েছে স্ত্রীয়ের। এখন হাসপাতালে শুয়ে মৃত্যুর দিন গুনছেন তিনি। কিডনি দানের জন্য সবাই এগিয়ে আসলেও কারোর সঙ্গে তা মিলছে না। দু’দিন অন্তর অন্তর করাতে হচ্ছে ডায়ালিসিস। এই অবস্থায় স্বামীর সঙ্গ হারালেন অসুস্থ সুনীতা। স্ত্রীয়ের এই অবস্থা দেখে তাঁকে একা ফেলে রেখে চলে গেলেন সুনীতার স্বামী আকলু রাম। আর যাওয়ার সময় বলে গেলেন, “এখন তোমার সঙ্গে থাকা খুব কঠিন। তুমি বাঁচো কী মরো আমার এখন আর কিচ্ছু যায় আসে না।” দুটো কিডনি ও স্বামী ছাড়া তিন সন্তান নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই মৃত্যুর অপেক্ষা করছেন সুনীতা।
সুনীতার এই পরিণতি সাম্প্রতিককালে হলেও এই ঘটনা সূত্রপাত কিছুটা গত বছরের সেপ্টেম্বরেই। বিহারের মুজাঃফরপুরের বাসিন্দা সুনীতা। স্বামী আকলু রাম। তাঁদের তিন সন্তান রয়েছে। দিন মজুরের কাজ করতেন সুনীতা। মাঝে জরায়ুতে সংক্রমণ দেখা দেয় তাঁর। আর মুজাঃফরপুরে বারিয়াপুর চকের কাছে শুভকান্ত ক্লিনিক নামের একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে ভর্তি হন চিকিৎসার জন্য। সেখানে তিনি কিছু ভুয়ো চিকিৎসকের পাল্লায় পড়েন বলেই অভিযোগ ওঠে। চিকিৎসার নাম করে তাঁরা সুনীতার দুটো কিডনিই চুরি করে নেয় বলে জানিয়েছেন তিনি। আর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতেই ডাক্তার এবং ওই ক্লিনিকের ডিরেক্টর পবন তাঁকে পটনার একটি নার্সিং হোমে ভর্তি করে দিয়ে পালিয়ে যায়। গত ৩ সেপ্টেম্বরের ঘটনা।
৪ মাস কেটে গিয়েছে। দুটো কিডনি ছাড়া এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন সুনীতা। এই পরিস্থিতিতে হাত ছেড়ে চলে গেলেন স্বামীও। এখন এসকে মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা চলছে তাঁর। প্রতিদিন একটু একটু করে সুনীতার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। কিডনি দানের জন্য অনেকেই এগিয়ে এসেছিলেন। তবে কারোর সঙ্গে তাঁর কিডনি মেলেনি। কিডনি দানের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন সুনীতার স্বামী আকলু রামও। তবে তাঁর কিডনিও মেলেনি। তারপর স্বামী-স্ত্রীয়ের মধ্যে কোনও একটা বিষয় নিয়ে ঝামেলা হতেই তিন সন্তান আর স্ত্রীকে রেখে চলে যান আকলু রাম। সুনীতা বলছেন, “আমি যখন সুস্থ ছিলাম তখন দিন মজুরের কাজ করতাম। আমার পরিবারের দায়িত্ব নিতাম। এখন যেহেতু আমি অসুস্থ ও আমায় ছেড়ে চলে গেল।” যাওয়ার সময় বলে গিয়েছে,”এখন তোমার সঙ্গে থাকা খুব কঠিন। তুমি বাঁচো কী মরো আমার এখন আর কিচ্ছু যায় আসে না।” সুনীতার এখন ভয়, তিনি অসুস্থ বলে স্বামী আরেকটি বিয়ে করতে পারেন।
প্রসঙ্গত, হাসপাতালে বর্তমানে সুনীতার মা তাঁর দেখভাল করছেন। সুনীতাকে সাহায্য় করার চেষ্টা করছে হাসপাতালের ম্যানেজমেন্টও। তবে এখনও পর্যন্ত সেরকম কোনও কিডনি দাতার খোঁজ মেলেনি যাঁর সঙ্গে সুনীতার কিডনির মিল হবে। এদিকে কিডনি চুরির সঙ্গে জড়িত পবনকে পুলিশ আগেই গ্রেফতার করেছে এবং এখন তিনি জেলেই দিন কাটাচ্ছেন।