নয়া দিল্লি: বিলকিস বানো গণধর্ষণ মামলার দোষীদের দ্রুত মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘অপরাধের প্রকৃতি’এবং ‘মামলার প্রমাণ’ বিবেচ্য বিষয় নয়। তবে তাদের মুক্তি দেওয়ার সময় তাদের কোনও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে কিনা, তা বিচার করবে আদালত। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিলকিস বানো গণধর্ষণ মামলার দোষীদের অকাল মুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে করা আবেদনের শুনানি চলাকালীন এমনটাই জানিয়েছেন, বিচারপতি বিভি নাগারত্ন এবং বিচারপতি উজ্জল ভূঁইঞার বেঞ্চ। বিচারপতি নাগরত্ন প্রশ্ন করেন, “কোনও কোনও আসামির সঙ্গে কি অন্যরকম আচরণ করা হচ্ছে? সেটাই আসল প্রশ্ন? কোনও কোনও আসামি কি অন্যদের থেকে বেশি সুবিধা পেয়েছেন?”
আসামিদের পক্ষে আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী সিদ্ধার্থ লুথরা। বিচারপতি নাগারত্নের প্রশ্নের জবাবে তিনি যুক্তি দেন, “সব আসামিকে একভাবে দেখা উচিত নয়। শুধুমাত্র, জঘন্য অপরাধের আসামি বলে কারও ক্ষমা পাওয়ার অধিকার অস্বীকার করা যায় না।” তিনি আরও বলেন, আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে অপরাধের প্রকৃতি এবং প্রমাণ নিয়ে তর্ক করা হচ্ছে। কিন্তু, বর্তমান মামলার ক্ষেত্রে আর এই বিষয়গুলি নিয়ে চর্চার প্রয়োজন নেই। আইন, আইনের পথে চলেছে। প্রশ্ন হল শাস্তি কবে শেষ হবে? এই মানুষগুলোকে কি স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা উচিত? এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কি সরকারের নেই?” তিনি আরও জানান, মহারাষ্ট্রের এক নিম্ন আদালতের বিচারকও অপরাধীদের সংস্কারের সম্ভাবনা এবং কারাগারে তাদের আচরণ কেমন ছিল তা বিবেচনা করার বদলে অপরাধের প্রকৃতির বিবেচনা করেছে। আর তার ভিত্তিতেই আদালত বিলকিস বানোর ধর্ষকদের দ্রুত মুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছে।
আদালত তাঁর যুক্তি মেনে নিয়েছে। তবে, শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, আসামীদের মওকুফের সময় কোনও বাড়তি আইনি সুবিধা দেওয়া হয়েছে কিনা, এটাই এই মামলার সবথেকে বড় প্রশ্ন। গত মাসে এই মামলার শুনানিতে আদালত জানিয়েছিল, কোনও ফৌজদারি মামলার আসামিদের সমাজে ফিরে আসার সাংবিধানিক অধিকার আছে। কেন সাজা মকুবের নীতি আসামিদের বেছে বেছে প্রয়োগ করা হচ্ছে, গুজরাট এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে জিজ্ঞাসা করেছিল আদালত। সম্প্রতি অন্য এক মামলায় অকাল মুক্তির আবেদনগুলি সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করার উপর গুরুত্ব দিয়েছে। আদালত আরও জানিয়েছে, সাজা মকুবের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়, বিচারকের মতামত যান্ত্রিকভাবে বিবেচনা করা উচিত নয়।
২০০২ সালের গুজরাট হিংসার সময় বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ করেছিল এবং তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেছিল এই ১১জন আসামি। রাধেশ্যাম নামে তাদের একজন সাজা মকুবের আবেদন করেছিল। তার আবেদন মেনে নিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের এই রায়ের পরই, ২০২২-এর মে মাসে, এই জঘন্য অপরাধের বাকি দোষীদেরও ক্ষমা করে দিয়েছিল গুজরাট সরকার। গুজরাটের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত আসামিদের। সাজা মকুবের এই সিদ্ধান্তকে শীর্ষ আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছেন বিলকিস বানো এবং আরও কয়েকজন। বর্তমানে সেই আবেদনের শুনানি চলছে। পরবর্তী শুনানি হবে ২০ সেপ্টেম্বর।