নয়া দিল্লি: বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর), আসন্ন দিল্লি পুর নির্বাচনের জন্য ৪০ জনের নির্বাচনী কমিটিতে তৈরি করল কংগ্রেস। কমিটিতে কংগ্রেসের দিল্লি শাখার সভাপতি অনিল চৌধুরী, এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক অজয় ম্যাকেন-সহ দিল্লি কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের রাখা হয়েছে। তবে, একই সঙ্গে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে জগদীশ টাইটলারকে। ১৯৮৪ সালের শিখ দাঙ্গায় অভিযুক্ত তিনি। আর এই বিতর্কিত ব্যক্তিত্বকে তাদের নির্বাচনী কমিটিতে জায়গা দেওয়া নিয়ে দারুণ উত্তপ্ত রাজধানীর রাজনৈতিক মহল।
বিজেপি, আম আদমি পার্টি – দুই রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেই কংগ্রেসের এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে। বিজেপি সাফ বলেছে, এটা হল ‘শিখদের ঘায়ে নুন ছেটানোর’ মতো পদক্ষেপ। বিজেপির দিল্লি শাখার মুখপাত্র আরপি সিং টুইট করে বলেছেন, “কংগ্রেস তাদের দিল্লি রাজ্য নির্বাচন কমিটিতে জগদীশ টাইটলারকে জায়গা দিয়ে, ১৯৮৪ সালের গণহত্যায় শিখদের যে ক্ষত তৈরি হয়েছিল, তাতে নুন ছিটিয়েছে। এই পদক্ষেপে স্পষ্ট যে, রাজীব গান্ধী এবং তাঁর দলবল ১৯৮৪ সালে যা করেছিলেন, তার জন্য কংগ্রেসের কোনও অনুতাপ নেই।”
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই সমালোচনার জবাবে বলা হয়েছে, জগদীশ টাইটলারকে কমিটিতে রাখা হলেও, তাঁকে কোনও নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়া হবে না। অজয় ম্যাকেন বলেছেন, “নিয়ম মেনেই টাইটলারকে এই কমিটির সদস্য করা হয়েছে। তাঁকে কোনও দায়িত্ব দেওয়া হবে না। বিজেপি মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা করছে। ১৯৮৪ সালের দাঙ্গার সকল অপরাধীকেই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস তাদের কারোর পাশে নেই। আমরা যদি আজ টাইটলারকে সরিয়ে দিই, বিজেপি কাল অন্য কোনও ইস্যু নিয়ে আসবে।”
১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর নিজের দেহরক্ষীর গুলিতেই নিহত হয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তারপরই, দিল্লি ও সংলগ্ন অঞ্চলে শুরু হয়েছিল শিখ নিধন। শিখ সম্প্রদায়ের অন্তত ৩০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। দাঙ্গা বিধ্বস্ত এলাকায়, জনতাকে শিখদের বিরুদ্ধে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল জগদীশ টাইটলারের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে গণহামলায় তিন শিখ ব্যক্তির মৃত্যুর পিছনে তিনি সরাসরি দায়ি বলে অভিযোগ ছিল।
জগদীশ টাইটলারের সঙ্গেই শিখ দাঙ্গায় জড়িত হিসেবে অভিযুক্ত হয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা সজ্জন কুমার। দিল্লি হাইকোর্ট তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। তবে, জগদীশ টাইটলারের বিরুদ্ধে ওঠা কোনও অভিযোগই প্রমাণ করা যায়নি। সেই থেকে তাঁকে সামনে আনতে গেলেই অস্বস্তির মুখে পড়তে হয়েছে কংগ্রেসকে। ২০০৪ সালে মনমোহন সিং-এর মন্ত্রিসভাতেও তাঁকে জায়গা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, বিরোধী দলগুলির প্রবল বিক্ষোভের মুখে তাঁকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল। তারপরও বিভিন্ন সময়ই কংগ্রেসের কর্মসূচিতে সামনের সারিতেই দেখা গিয়েছে জগদীশ টাইটলারকে। এবার দিল্লি পুর নির্বাচনের আগে ফের তাঁকে কেন্দ্র করে তৈরি হল বড় বিতর্ক।