নয়া দিল্লি: রবিবার (১৪ অগস্ট) সারা দেশে ‘দেশভাগের ভয়াবহতা স্মরণ দিবস’ পালন করা হচ্ছে। এই উপলক্ষ্যে এদিন বিজেপির পক্ষ থেকে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করা হয়েছে। ভিডিয়োটিতে কোন কোন ঘটনা ১৯৪৭ সালের দেশভাগের দিকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল, তার নিজেদের মতো করে তার ব্যাখ্যা দিয়েছে। সেই সময়ের বেশ কিছু ফুটেজ এবং নাটকীয় আবহ সঙ্গীত এবং চটকদার এডিটিং-এর মাধ্যমে সাত মিনিট দীর্ঘ এই ভিডিওটি তৈরি করা হচ্ছে। তবে এই ভিডিয়োতে পাকিস্তান সৃষ্টি তথা দেশভাগের জন্য ‘মহম্মদ আলি জিন্নার নেতৃত্বাধীন মুসলিম লিগের দাবির সামনে জওহরলাল নেহরুর মাথা নত করা’কে দায়ী করা হয়েছে। যা নিয়ে পাল্টা আওয়াজ তুলেছে কংগ্রেস।
বিজেপির এদিনের ভিডিয়োতে সিরিল জন র্যাডক্লিফকে দেখানো হয়েছেয ব়্যাডক্লিফই পঞ্জাব ও বাংলাকে ভাগ করে নয়া ভারত ও পাকিস্তানের বিভাজিত মানচিত্র তৈরি করেছিলেন। এদিনের ভিডিয়োতে বিজেপি প্রশ্ন তুলেছে, ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে কোনও জ্ঞান না থাকা এক ব্যক্তিকে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কীভাবে ভারতকে ভাগ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল? ভিডিয়োর ভাষ্যে বলা হয়েছে, “যাদের ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, সভ্যতা, মূল্যবোধ, তীর্থস্থান সম্পর্কে কোনও জ্ঞান ছিল না, তারা মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে, বহু শতাব্দী ধরে একসঙ্গে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে সীমানা টেনেছিল। সেই সময় সেই লোকেরা কোথায় ছিল, যাদের এই বিভাজনকারী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার দায়িত্ব ছিল?” পুরো ভিডিয়ো জুড়ে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর ছবি দেখানো হয়েছে।
দেশভাগের ভয়াবহতার জন্য কংগ্রেসের পাশাপাশি কমিউনিস্ট পার্টিকেও দুষেছে বিজেপি। বিজেপির প্রকাশিত ভিডিয়োতে দাবি করা হয়েছে, কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা মুসলিম লিগকে সমর্থন করেছিলেন এবং একটি পৃথক মুসলিম দেশের দাবিকে ন্যায্যতা দিয়েছিলেন।
এই ভিডিয়ো প্রকাশের পরই বিজেপিকে পাল্টা আক্রমণ করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশের অভিযোগ, ১৪ অগস্ট দিনটিকে ‘দেশভাগের ভয়াবহতা স্মরণ দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত করার পিছনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘আসল অভিপ্রায়’ ছিল, “তাঁর বর্তমান রাজনৈতিক লড়াইয়ের জন্য সবচেয়ে বেদনাদায়ক ঐতিহাসিক ঘটনাগুলিকে ব্যবহার করা’। তিনি বলেন, “আধুনিক দিনের সাভারকর এবং জিন্নারা জাতিকে বিভক্ত করার জন্য তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।” প্রসঙ্গত, গত বছর ১৪ অগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় ভারতীয়দের দুর্ভোগ এবং আত্মত্যাগের কথা জাতিকে স্মরণ করানোর জন্য প্রতি বছর ১৪ অগস্টকে ‘দেশভাগের ভয়াবহতা স্মরণ দিবস’ হিসেবে স্মরণ করা হবে।
বিজেপির প্রকাশিত ভিডিয়োটির প্রতিক্রিয়ায় জয়রাম রমেশ আরও দাবি করেছেন, দেশভাগের ট্র্যাজেডিকে ঘৃণা এবং কুসংস্কারের জন্য ‘অপব্যবহার’ করা যাবে না। উল্টে তিনি বিজেপিকেই দেশভাগের জন্য দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, “সত্যিটা হল সাভারকরই দ্বিজাতি তত্ত্বের উদ্ভব করেছিলেন এবং জিন্না তাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। সর্দার প্যাটেল লিখেছেন, ‘আমি অনুভব করেছি যে, আমরা যদি দেশভাগকে মেনে না নিই, তাহলে ভারত অনেকগুলি ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে এবং সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে’।”
এদিন ‘দেশভাগের ভয়াবহতা স্মরণ দিবস’ উপলক্ষে সেই ঘটনায় নিহতদের এবং ক্ষতিগ্রস্তদের কথা স্মরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জয়রাম রমেশ প্রশ্ন তুলেছেন, প্রধানমন্ত্রী কি এই অবসরে জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কেও স্মরণ করবেন? যিনি শরৎচন্দ্র বসুর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বঙ্গভঙ্গের পক্ষে মত দিয়েছিলেন এবং ‘দেশভাগের করুণ পরিণতি যখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে’, সেই সময় স্বাধীন ভারতের প্রথম মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছিলেন? কং সাংসদ আরও বলেন, “ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গান্ধী, নেহেরু, প্যাটেল এবং আরও অনেকের উত্তরাধিকার বজায় রাখবে, যাঁরা জাতিকে একত্রিত করার প্রচেষ্টায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন। ঘৃণার রাজনীতি পরাজিত হবেই।”