TV9 বাংলা ডিজিটাল: সারা দেশে ‘গেরুয়া ঝড়’। দিনটা বিজেপিরই। হইহই করে প্রায় সব রাজ্যে জিতছে পদ্ম শিবির। বিহার বিধানসভা নির্বাচন তো বটেই দেশের বেশির ভাগ রাজ্যের উপ নির্বাচনেও মোদী ম্যাজিক। উত্তর প্রদেশের উন্নাও ধর্ষণ কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেলে গিয়েছেন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেনগার (Kuldeep Sengar) । কিন্তু তার বিন্দু মাত্র প্রভাব পড়ল না তাঁর কেন্দ্র বেঙ্গারমাউয়ে। ওই কেন্দ্রের উপ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করল বিজেপি।
দোষী সাব্যস্ত বিধায়ক কুলদীপ সেনগারের আসনে উপ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন বিজেপির শ্রীকান্ত কাতিয়ার। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী তিনি কংগ্রেসের আরতি বাজপেয়ীকে ৩১ হাজার ৩৯৮ ভোটে পরাজিত করেছেন। সেনগারকে দল থেকে বহিষ্কৃত করেছিল বিজেপি। কিন্তু বিগত কয়েক মাস ধরে একাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে উত্তর প্রদেশে। হাথরসের ঘটনায় তো রীতিমতো বিপাকে পড়েছিল যোগী প্রশাসন। তার বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়ল না যোগী রাজ্যের উপ নির্বাচনে।
উন্নাও কাণ্ডেও গড়িমসির অভিযোগ উঠেছিল যোগীর পুলিসের বিরুদ্ধে। খোদ নির্যাতিতা চিঠি দিলেও প্রথমে দলের বিধায়কের বিরুদ্ধে যোগী আদিত্যনাথ কোনও ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ। এর তীব্র সমালোচনা করেছিলেন বিরোধীরা। এছাড়া একাধিক বার ‘জঙ্গলরাজ’ বলে যোগীর বিরোধিতায় সরব হয়েছেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী। তবে এই বিরোধিতা ছিটেফোঁটাও প্রভাবিত করতে পারল না জনতাকে।
উন্নাও ধর্ষণ কাণ্ড: ২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশের উন্নাওয় ১৬ বছরের এক কিশোরীর ধর্ষণ হয়। সেই ঘটনায় অভিযোগ ওঠে বিধায়ক কুলীপ সেনগারের বিরুদ্ধে। চাকরি দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন বিধায়ক কুলদীপ সেনগার। তাই ১৭ বছরের কিশোরী গিয়েছিলেন বিধায়কের বাড়িতে। অভিযোগ, সেখানেই ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেন বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেনগার। এখানেই শেষ নয়।
চাকরির লোভে ১১ জুন শুভম সিংহের সঙ্গে বেরিয়ে ছিলেন ওই কিশোরী। তখন শুভম সিং, তাঁর গাড়ির চালক অওধেশ তিওয়ারি ও ব্রজেশ যাদব-সহ বেশ কয়েক জন মিলে তাঁকে ফের ধর্ষণ করেন। পুলিসের শরণাপন্ন হয়ে কোনও কাজ হয়নি। তারপর নির্যাতিতা সম্পূর্ণ ঘটনা জানিয়ে যোগী আদিত্যনাথকে চিঠি লেখেন। চিঠি দিয়ে ১ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনও কাজ হয়নি।
এরপর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে কুলদীপ সিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন নির্যাতিতার মা। এরপরেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি যোগী প্রশাসন। উন্নাও আদালতে শুনানির জন্য গেলে নির্যাতিতার বাবকে গাছে বেঁধে বেধড়ক মারে বিধায়কের ভাই অতুল সিং। এরপরও পুলিসের অভিযোগের খাতায় নাম নাম দায়ের হয়নি বিধায়কের ভাইয়ের।
২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল নির্যাতিতার বাবাকেই গ্রেফতার করে পুলিস। এরপর যোগী আদিত্যনাথের বাস ভবনের সামনে গিয়ে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন নির্যাতিতা। সেনগার অভিযোগ উড়িয়ে জানান, তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। এরপর ৯ এপ্রিল পুলিসি হেফাজতে মৃত্যু হয় নির্যাতিতার বাবার। ময়নাতদন্তে জানা যায়, বাবার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল। ১০ এপ্রিল পুলিস গ্রেফতার করে অতুল সিং-সহ ৫ জনকে। ১২ এপ্রিল সিবিআইর হাতে মামলা তুল দেয় রাজ্য সরকার। ১৩ এপ্রিল গ্রেফতার হন কুলদীপ সেনগার। ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর দোষী সাব্যস্ত হন বিধায়ক কুলদীপ সেনগার। ২০ ডিসেম্বর তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত।